Tuesday, May 17, 2022

ঈশ্বর ও আয়না

 ঈশ্বর ও আয়না

সৌরভকুমার ভূঞ্যা

 

পলাশের বাড়ানো খামটা হাতে নিয়ে অভিজিৎ জিজ্ঞেস করে, ‘কী আছে এর মধ্যে?’

    ‘সৌম্যকান্তিবাবুর গল্পটি।’

    অভিজিৎ একটু অবাক হয় ‘এটা আমাকে দিচ্ছ কেন? এটা তো আমিই তোমাকে দিয়েছিলাম।’      

    ‘লেখাটি ছাপা যাবে না।’ ইতস্তত করে কঠিন কথাটা বলেই ফেলে পলাশ

    চমকে ওঠে অভিজিৎ ‘তোমার কী মাথা খারাপ হয়েছে?’

    ‘আমি অনেক ভেবেই বলছি।’

    ‘জানো তুমি কার সম্পর্কে কথা বলছ! সৌম্যকান্তিবাবু একজন প্রতিষ্ঠিত লেখক যাকে তাকে উনি লেখা দেন না নিতান্ত আমার আমার অনুরোধ ফেলতে পারেননি আর তুমি তার লেখাকে বলছ অমনোনীত! তোমার দুঃসাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি!’

    ‘আসলে লেখাটি ঠিকঠাক মানে পৌঁছোয়নি।’

    ‘মান! লেখার মান বিচার করছ তুমি! কত লেখা লিখেছ নিজে?’

    পলাশ থমকে যায় বাস্তবিক সে কিছু লিখতে পারে না সে দেখেছে লেখার ব্যাপারটা খুব কঠিন প্রথম প্রথম একটু-আধটু চেষ্টা করেছিল, পরে হাল ছেড়ে দিয়েছে। তবে সাহিত্যের প্রতি তার গভীর ভালোবাসা সেই ভালোবাসা থেকেই সম্পাদনা করার পাগলামি পত্রিকা শুরু করার সময় থেকেই সে স্থির করেছিল সাহিত্যের সঙ্গে কোনো আপোষ করবে না। ফলে, মাত্র পাঁচ বছরেই তার আকাশ-আলো পত্রিকা সাহিত্য মহলে একটি জায়গা করে নিয়েছে সম্পাদক হিসেবে মাঝে মাঝে কিছু লিটল ম্যাগাজিন মেলায় ডাক পায় সে এমনই এক অনুষ্ঠানে পরিচয় হয়েছিল কবি অভিজিৎ সরকারের সঙ্গে

    পত্রিকাটি প্রথম দেখে অভিজিৎ অভিভূত হয়ে যায় খুব ভালোলাগে পত্রিকাটি পলাশের সঙ্গেও ধীরে ধীরে নিবিড় বন্ধন গড়ে ওঠে বেশ কিছু কবিতা সে লিখেছে এই কাগজে অভিজিতের বহু নামী সাহিত্যিকের সঙ্গে পরিচয় পলাশের অনুরোধে তাদের অনেকের লেখা তিনি সংগ্রহ করে দিয়েছে ঠিক যেমন করে সৌম্যকান্তির লেখাটি জোগাড় করে দিয়েছিল

    সৌম্যকান্তি পলাশের প্রিয় লেখক কৈশোর থেকে তার লেখার ভক্ত সে সৌম্যকান্তির প্রায় সব লেখাই তার পড়া পলাশ যখন জানতে পারে সৌম্যকান্তির সঙ্গে অভিজিতের ঘনিষ্ঠ পরিচয় আছে, তখন নিজের কাগজে তার লেখা প্রকাশের ইচ্ছে জাগে। মনের কথা জানায় অভিজিৎকে

    ‘ওনার লেখা পাওয়া অসম্ভব।’

    প্লিজ, আপনি একটু দেখুন

    বাস্তবটা বোঝার চেষ্টা কর উনি প্রতিষ্ঠিত লেখক লেখার জন্য টাকা নেন তুমি কি লেখার জন্য টাকা দেবে?’

    নিজের টাকায় পত্রিকা করি টাকা দেওয়ার সামর্থ কোথায়?’

    তাহলে ওনার লেখার কথা ভুলে যাও

    হাল ছাড়ে না পলাশ আমি উনার লেখার অন্ধ ভক্ত ওনার লেখা আমার কাগজে ছাপতে পারলে জীবন ধন্য হয়ে যাবে প্লিজ, আপনি একটু চেষ্টা করুন

    পলাশের নাছোড় জেদের কাছে হার মানে অভিজিৎ বলে, ঠিক আছে, এত করে যখন বলছ, আমি একবার চেষ্টা করে দেখব তবে বেশি আশা কর না এক কাজ কর পত্রিকার সাম্প্রতিক কপি সহ লেখার অনুরোধ জানিয়ে একটি চিঠি ওনার ঠিকানায় পাঠিয়ে দাও আমি বাকিটা দেখছি

    অভিজিৎ আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছিল সৌম্যকান্তি তারই হাত দিয়ে একটি লেখা দিয়েছিলেন সেই লেখা পলাশ বাতিল করছে জেনে যেমন অবাক হয়, তেমনি কিছুটা অপমানিতও বোধ করে মনে হয়, সৌম্যকান্তির নয়, পলাশ যেন তার লেখাটাই বাতিল করছে

    আমতা আমতা করে পলাশ বলে, আমি লিখতে পারি না তবে লেখার ভালো-মন্দ বুঝতে পারি

    ভালো-মন্দ বুঝলেই ভালো সম্পাদক হওয়া যায় না সম্পাদনার কিছু নিয়মকানুন আছে সেটা জানা উচিত

    পলাশ চুপ করে থাকে বিরক্তিমাখা সুরে অভিজিৎ বলে, এটা কি জানো, আমন্ত্রিত লেখা বাতিল করা যায় না?’

    তা জানি

    তাহলে কী করে একথা বলছ!

    আসলে লেখাটি ঠিকঠাক হয়ে ওঠেনি

    বেশ, একথা আমাকে বলছ কেন? সরাসরি লেখককে গিয়ে বল

    বুকে একটা ধাক্কা অনুভব করে পলাশ এমন একজন নামী লেখকের মুখোমুখি হয়ে এ-কথা বলার সাহস আছে কিনা সে জানে না কী জবাব দেবে ভেবে পায় না

    গলায় আগের রুক্ষতা বজায় রেখে অভিজিৎ বলে, লেখাটি তো আমার নয় লেখা নিয়ে কিছু বলার থাকলে সরাসরি লেখককে বলা উচিৎ নয় কি?’

    পলাশ বুঝে পায় না সৌম্যকান্তির মুখোমুখি হয়ে এসব কথা বলতে পারবে কী না

    তাকে চুপ থাকতে দেখে অভিজিৎ বিদ্রুপের সুরে বলে, কথা ফুরিয়ে গেল দেখছি! সাহস আছে, আমাকে যা বললে সৌম্যকান্তির মুখোমুখি হয়ে সে কথা বলার?’

    মুখ তুলে তাকায় পলাশ অভিজিতের চোখে চোখ রাখে কিন্তু কোনো কথা বলে না

 

২.

এমন সাক্ষাৎকারের কথা ভাবেননি সৌম্যকান্তিপলাশকে দেওয়ার মতো সময় তার নেই কিন্তু অভিজিৎ যখন ফোনে পলাশের ব্যাপারটা জানায় তখন তিনি কেমন নড়েচড়ে ওঠেন তার আত্মমর্যাদায় ঘা লাগে একটা ছোটো কাগজের অনামী সম্পাদকের এতখানি স্পর্ধা! নামীদামী পত্রিকার সম্পাদকেরা তার একটা লেখার আশায় তীর্থের কাকের মতো বসে থাকে সেখানে একটি ছোটো কাগজের সম্পাদক তার লেখা ফেরৎ দিতে এসেছে! বেশ অপমানিত বোধ করেন তিনি ফোনেই অভিজিৎকে বেশকিছু কথা শুনিয়ে দেন ভেবেছিলেন, ব্যাপারটা মাথা থেকে সরিয়ে দেবেন কিন্তু লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর এই প্রথম কেউ তার লেখা অমনোনীত করেছে তাই একটা কৌতূহল তাকে তাড়িত করে

    প্রণাম করে উল্টোদিকের সোফায় বসে পলাশ বেশ জড়োসড়ো অদ্ভুত এক অনুভূতি তাকে গ্রাস করে রেখেছে পলাশের দিকে তাকান সৌম্যকান্তি ভাবেন, এই সেই ছেলে যে তার লেখা ফেরৎ দিতে এসেছে সুপ্ত অপমানবোধটা জেগে উঠতে চায় কোনোরকমে নিজেকে সংযত করেন

    আপনার নাম পলাশ?’

    মাথা নেড়ে সায় দিয়ে সঙ্কোচমাখা সুরে পলাশ বলে, স্যার, আমায় তুমি করে বললে ভালো লাগবে

    একপলক তার দিকে তাকিয়ে কিছু না জানার ভান করে সৌম্যকান্তি বলেন, বলো কী জন্য এসেছ?’

    পলাশের বুক ধুকপুক করতে থাকে বলাটা সহজ নয় তা সে জানত কী বলবে, কীভাবে বলবে অনেকবার রিহারশাল দিয়েছে কিন্তু এখানে ঢোকার পর সবকিছু কেমন গুলিয়ে গেছে নিজেকে খুব অসহায় মনে হয় শব্দগুলো গলার কাছ পর্যন্ত এসে পথ হারিয়ে ফেলে ঘামতে থাকে সে বুকের ওঠানামা দ্রুত হয়

    দ্যাখো, আমি খুব ব্যস্ত এভাবে চুপ করে থেকে আমার সময় নষ্ট কর না যা বলার বলো তাড়াতাড়ি

    এবার মুখ খুলতে হয় পলাশকে কাঁপা কাঁপা সুরে বলে, স্যার, আমার পত্রিকার জন্য আপনার কাছ থেকে একটি লেখা নিয়েছিলাম কিন্তু স্যার, লেখাটি ছাপতে পারছি না

    এই কথা যে পলাশ বলবে তার মানসিক প্রস্তুতি ছিল সৌম্যকান্তির তবুও এখন সরাসরি কথাটা শুনে মুখটা সহসা অপমানে ফ্যাকাশে হয়ে যায় সুপ্ত ক্রোধটা জেগে ওঠে

    কত বড়ো সম্পাদক তুমি! কী বোঝ সম্পাদনার? তোমার স্পর্ধা দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি! আর এক মুহূর্তও এখানে নয় গেট লস্ট কঠিন শব্দগুলো মনের মধ্যে জেগে উঠলেও নিজেকে সামলান সৌম্যকান্তি শান্ত অথচ কঠিন সুরে বলেন, তোমাকে আমি চিনি না তোমার পত্রিকার নামও জানি না শুধুমাত্র অভিজিৎ-এর অনুরোধ ফেলতে পারিনি আর তুমি...!’ মেজাজটা শান্ত হতে চায় না সুপ্ত অহংটা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে নামী-দামী কাগজের সম্পাদকেরা হত্যে দিয়ে থাকে আমার লেখার জন্য তুমি বোধহয় জানো না, কার সঙ্গে কথা বলছ

    চমকে ওঠে পলাশ কিছুটা ভয়মাখা সুরে বলে, জানি স্যার মনটা শক্ত করে শান্ত আবেগমাখা সুরে বলে, স্যার, একটু আগে যখন আপনার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছিলাম, তখন অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছিল আপনাকে ঠিক বোঝাতে পারব না আমার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিল না আমি আপনার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছি এ-তো বাড়ি নয়, আমার কাছে মন্দির কতবার মনে মনে ভেবেছি একদিন যদি আপনার সঙ্গে দেখা হত! কিন্তু স্বপ্নেও ভাবিনি তা সত্যি হবে। এখনও আমার বিশ্বাস হচ্ছে না আমি আপনার মুখোমুখি বসে আছি আমার কাছে আপনি কেবল লেখক নন, এক আশ্চর্য মানুষ কখনও মনে হত আপনি বোধহয় কোনো ভিনগ্রহের মানুষ, কখনও মনে হত ভগবান

    একটু চমকে ওঠেন সৌম্যকান্তি পলাশ কী বলতে চাইছে ঠিকঠাক বুঝতে পারেন না পলাশও ইতিমধ্যে নিজেকে অনেকটা গুছিয়ে নিয়েছে আগের সুরে বলে চলে, স্কুলে পড়ার সময় থেকে আপনার লেখার আমি অন্ধ ভক্ত তখনই আপনার অনেক বই কিনে পড়ে ফেলেছিলাম পুজোসংখ্যার সব লেখা পড়তাম আপনার রূপকথার গল্প, রহস্য গল্প, কিশোর-গোয়েন্দা গল্পগুলো অসাধারণ। চুম্বকের মতো আকর্ষণ করত লেখাগুলো একবার পড়া শুরু করলে শেষ না করে পারতাম না অন্যদিকে প্রেমের গল্পগুলোও ছিল অসাধারণ। স্কুলে পড়ার সময়ই আপনার অনেক প্রেমের গল্প-উপন্যাস পড়া হয়ে গিয়েছিল তখন ওসব পড়ার অনুমতি ছিল না লাইব্রেরি থেকে এনে পড়ার বইয়ের মধ্যে রেখে লুকিয়ে পড়তাম কিন্তু অনেকবার ধরা পড়ে গেছি এর জন্য বাবা-মায়ের মারও খেতে হয়েছে বড়ো হওয়ার পর আর সেসব বাধা ছিল না আপনার প্রকাশিত সব উপন্যাসই আমি পড়েছি ছোটোবেলায় পড়া অনেক লেখা বড়ো হয়ে আবারও পড়েছি ছোটোবেলায় পড়া একরকম ছিল, পরে অন্যরকম

    পলাশকে কথায় পেয়ে বসে গলগল করে বলে যায় সে সৌম্যকান্তি চুপ করে শুনেত থাকেন সময় হিসেব ভুলে যায় পলাশ গল্প-উপন্যাসের ভালোলাগা ব্যক্ত করে সেই সঙ্গে সঙ্গে কোন গল্প বা উপন্যাস ঠিক মন কাড়তে পারেনি সেটা বলে কোথাও বলে বাস্তব জীবন বা সমাজের ছবি জ্বলজ্যন্ত ভাবে ফুটে উঠেছে তার জন্য উচ্ছ্বাস দেখায় আবার কোনো গল্পে তথ্যগত ত্রুটি, কোনো উপন্যাসের কোনো একটি বিশেষ জায়গা ঠিক হয়নি, কোন রহস্য গল্পটি শেষ পর্যায়ে এসে সাসপেন্স ধরে রাখতে পারেনি বলে যেতে থাকে এককথায় লেখার ভালোলাগা ব্যক্ত করার পাশাপাশি কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতিও সমানভাবে তুলে ধরে

    পলাশের কথা শুনতে শুনতে সৌম্যকান্তি একটা ঘোরের মধ্যে আটেক যান একটা ছেলে তার প্রায় সব লেখাই পড়েছে, এটাই তো বিরাট প্রাপ্তি শুধু পড়া নয়, গভীর মনযোগ সহকারে পড়েছে সবথেকে বড়ো কথা, অনেক গল্প-উপন্যাসের কাহিনি তার নিজেরই এখন ঠিকঠাক মনে নেই, সেখানে ছেলেটি লেখার পাশাপাশি তার ভালো-মন্দ, ত্রুটি-বিচ্যুতি মনে রেখেছে নিখুঁতভাবে এরকম পাঠক অনেক ভাগ্য করলে পাওয়া যায়

    স্যার, আমি আপনার লেখার অন্ধ ভক্ত এতদিন আপনার লেখা পড়তাম আর অবাক হয়ে ভাবতাম, একজন মানুষ একজীবনে এত লেখা লিখতে পারেন! তাও সবরকম পাঠকের জন্য! এতভাবে তিনি সমাজকে তুলে আনতে পারেন লেখায়! ভাবনার এত বৈচিত্র্য! আমার খুব মনে হত এই মানুষটির নিশ্চয়ই আশ্চর্য কোনো ক্ষমতা রয়েছে একটা কথা প্রায়শই শুনি লেখালিখি ঈশ্বর প্রদত্ত ক্ষমতা কথাটা ঠিক না ভুল জানি না, তবে আমার আপনাকেই মনে হত ঈশ্বর, শব্দের ঈশ্বর

    সৌম্যকান্তির বুকে একটা জোর ধাক্কা লাগে। ভাবনাগুলো এলোমেলো হয়ে তালগোল পাকিয়ে যেতে থাকে অদ্ভুত দৃষ্টি মেলে চেয়ে থাকেন পলাশের দিকে

    একনাগাড়ে অনেকগুলো কথা বলে থামে পলাশ তার মনের মধ্যেও অদ্ভুত এক আলোড়ন চলছে নিজেকে কিছুটা সংযত করে শান্ত সুরে বলে, ভুল ঠিক কী বললাম জানি না যদি কিছু ভুল বলে থাকি আমার ক্ষমা করে দেবেন আমি স্বপ্নেও কখনো ভাবিনি আপনার মুখোমুখি হতে পারব আজ নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হচ্ছে এ আমার জীবনের অন্যতম প্রাপ্তি মনে হয়, আমার অনেক পুন্যের ফল

    আবেগে পলাশের কথা হারিয়ে যেতে থাকে তারপর কিছুটা সঙ্কোচমাখা সুরে বলে, শুধু একটাই যন্ত্রণা, আজ অপরাধী হয়ে আপনার কাছে আসতে হয়েছে আপনার লেখাটি আমি অনায়াসে আমার কাগজে ছাপতে পারি আমার কাগজে আপনার লেখা থাকলে কাগজটির ওজন বাড়বে আমিও একটু কৃতিত্ব পাব কিন্তু...

    আবারও একটু থামে পলাশ বাকি কথাটা বলতে খুব বাধো বাধো লাগছিল তবুও না বলে উপায় নেই তাই সঙ্কোচের সুরে বলে, স্যার, একবর্ণ লেখার ক্ষমতা আমার নেই। তাই অন্যের লেখা নিয়ে কিছু বলা আমার সাজে না। আর আপনার লেখা নিয়ে কিছু বলা, সে তো আপনাকে অপমানই করা কিন্তু আমার যেটুকু উপলব্ধি তাতে মনে হয়েছে এই লেখাটি আপনার নামের সঙ্গে খাপ খায় না এটি প্রকাশ হলে, লোকে লেখাটি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করবে আমার প্রিয় লেখককে নিয়ে কেউ বিরূপ মন্তব্য করলে আমি সহ্য করতে পারব না আর আমার কাগজের মাধ্যমে আপনি ছোটো হন, তা আমি চাই না... এদিকে লেখা নেওয়ার পর সেটা না প্রকাশ করলে আপনাকে অপমান করা হয় এই টানাপোড়েনে থাকতে না পেরে বাধ্য আপনার কাছে ছুটে এসেছি.... প্লিজ, আমাকে ক্ষমা করবেন

 

৩.

পলাশ চলে গেছে বিকেলেই তারপর থেকে সারাটা সন্ধ্যা মাথায় কেবল তার কথাই ঘুরেছে সৌম্যকান্তির অদ্ভুত একটা ঘোরের মধ্যে আটকে থেকেছেন তিনি পলাশ ঈশ্বর-দর্শনের আবেগময় অনুভব ব্যক্ত করে গেছে সৌম্যকান্তির মনে হয় এইদিক দিয়ে তিনিও বোধহয় সমান সৌভাগ্যের অধিকারী

    এখন রাত নির্জন। চারিদিক শুনশান খাতা-কলম নিয়ে বসেছেন সৌম্যকান্তি অসমাপ্ত লেখার শেষাংশটি আজকেই লিখে ফেলতে হবে কাল সন্ধ্যার মধ্যেই লেখাটি দিতে হবে কিন্তু শেষটা লিখতে গিয়ে চমকে ওঠেন ব্যাপারটা ঠিকঠাক মাথায় আসছে না কিছুটা বিভ্রান্ত সৌম্যকান্তি। শেষটা ভাবাই ছিল কিন্তু ভাবনাগুলো এতটাই এলোমেলো হয়ে গেছে যে ব্যাপারটা মাথায় ঠিকঠাক আসছে না কলম আটকে থাকে

    সৌম্যকান্তি অসমাপ্ত লেখাটা পড়তে শুরু করেন একবার...দু-বার...তিনবার... কিন্তু না, শেষের জায়গায় এসে বারে বারে আটকে যান কলমটা কিছুতে এগাতে চায় না সহসা মনের আয়নায় ভেসে ওঠে পলাশের মুখ চমকে ওঠেন সৌম্যকান্তি অদ্ভুত একটা শিহরণ বয়ে যায় শরীরের শিরায় শিরায়