ভয়ের
গণ্ডী ছাড়িয়ে...
করোণা নামক এক ক্ষুদ্র ভাইরাসের তাণ্ডবে টালমাটাল গোটা
পৃথিবী। বিশ্ব-মহামারী ডেকে এনেছে বিপর্যয়। এসব আর নতুন কোনো কথা নয়। প্রতিদিন
আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। হারিয়ে
গেছে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ। দীর্ঘ লকডাউনের অধ্যায় পেরিয়ে জীবন একটু একটু করে
স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছে ঠিকই, তবুও একরাশ আতঙ্ক আর ভয় জড়িয়ে রেখেছে আমাদের।
শুধু তো করোনা কিংবা বিশ্ব মহামারী নয়, আমপান নামক সাইক্লোনের তাণ্ডবে
বিপর্যস্ত গোটা রাজ্য। ওদিকে মহাকাশেও যেন অশনি সংকেত। সূর্য নাকি লকডাউনে চলে
গেছে। পাশাপাশি বারে বারে খবরের শিরোনামে উঠে আসছে ঝাঁকে ঝাঁকে গ্রহাণুর পৃথিবীর
দিকে ধেয়ে আসা। এমনিতেই তো ভয়ের উপকরণের অভাব নেই। তার ওপর রয়েছে তাকে আরও কত
ভয়াবহভাবে প্রকাশ করা যায়, মানুষকে ভয় পাইয়ে দেওয়া যায় তারই একটা প্রচেষ্টা।
সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায় কিংবা বিভিন্ন নিউজ পোর্টালে, পৃথিবী আর গ্রহাণুর কল্পিত
সংঘর্ষের ভয়ংকর ছবি দিয়ে মোটা মোটা শিরোনামে লেখা হচ্ছে পৃথিবীর ধ্বংসের কথা।
এরই মাঝে আবার ভয়ের খবর নিয়ে হাজির হয় মায়া ক্যালেন্ডার। মায়া ক্যালেন্ডারের হিসাব মেনে একটা সময় বলা
হয়েছিল ২০১২ সালে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই নিয়ে সিনেমাও নির্মিত হয়েছিল। যুক্তি, বিজ্ঞান সব হারিয়ে অদ্ভুত একটা ভয় চেপে বসেছিল মানুষের মধ্যে। সুখের
কথা, বাস্তবে তা হয়নি। কিন্তু কয়েকদিন আগে হঠাৎ শোনা গেল মায়া ক্যালেন্ডারের সেই
হিসেব নাকি ভুল ছিল। সোশ্যাল মিডিয়ায়, কোনো কোনো কাগজের পাতায় তা নিয়ে
প্রতিবেদনও প্রকাশিত হল। বলা হল সেই হিসেবের নাকি গণ্ডগোল ছিল। তখনকার গণনাকারীরা হিসেবে ভুলচুক করে ফেলেছিলেন। গননা
করতে গিয়ে তারা নাকি আট বছর হিসেব করতে ভুলে গিয়েছিলেন। ফল স্বরূপ, পৃথিবীবাসীর আর
নিস্তার নেই। এই ২০২০ তেই ধ্বংস হচ্ছে পৃথিবী। তাও আবার কোন দিন? না সূর্যগ্রহনের
দিন। সূর্য গ্রহণের মতো মহাজাগতিক ঘটনা নিয়ে এখনও অনেকের মনে নানান কুসংস্কার আছে।
আর সেই দিন পৃথিবী ধ্বংসের ঘোষণা! সত্যি মানুষকে ভয় পাওয়ানোর আর কত মহাজাগতিক উপাদান
যে আমাদের বিপর্যস্ত করবে জানা নেই। এদিকে আবার দেশে যুদ্ধ পরিস্থিতি। সীমান্তে
সংঘাত সৃষ্টি করছে চীন। ইতিমধ্যেই দেশের কুড়ি জন বীর যোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। সেখানে
এখন যুদ্ধ যুদ্ধ রব। ওদিকে চিরশত্রু পাকিস্তান তো আছেই, নেপাল ভূটানের মতো ছোটো
ছোটো রাষ্ট্রও এই মহামারী পরিস্থিতিতে ভারতের বিরুদ্ধে বিশৃঙ্ক্ষলা সৃষ্টি করার চেষ্টা
করছে। সবমিলিয়ে সময়টা একদম ভালো যাচ্ছে না। আতঙ্ক আর ভয় আমাদের ঘিরে ধরেছে।
কবে এই অবস্থা থেকে আমরা মুক্তি পাব, কবে আবার সবকিছু স্বাভাবিক হবে জানা নেই।
কিন্তু জীবন তো থেমে থাকতে পারে না। তাই এই টালমাটাল অবস্থার মধ্যেও সে চেষ্টা
করছে একটু একটু করে স্বাভাবিক হওয়ার। আর সাহিত্য জীবনেরই একটি অংশ। তাই সাময়িক
বাধা কাটিয়ে সহসা থমকে যাওয়া সাহিত্যের পথচলা একটু একটু করে স্বাভাবিক হওয়ার
চেষ্টা করছে। তবে পরিস্থিতির চাপে বদলে গেছে তার প্রকাশভঙ্গীমা। সেই ধারা মেনে
মেঘপালক-এর এই ব্লগ প্রকাশের উদ্যোগ। কেননা পরিস্থিতি যা তাতে কবে আবার মেঘপালক
ছাপার অক্ষরে প্রকাশ করা যাবে সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। এমনিতেই লিটল ম্যাগাজিনের
পথচলায় অনেক প্রতিবন্ধকতা। তার ওপর এই ভয়ানক পরিস্থিতি। কিন্তু প্রতিটি ছোটো
পত্রিকাই শেষপর্যন্ত বেঁচে থাকতে চায়। তাই এই উদ্যোগ। তবে খুব কম সময়ে এই পরিকল্পনা নেওয়ায়
এই সংখ্যাটি ঠিকঠাক গুছিয়ে করা সম্ভব হয়নি। আগামী সংখ্যা থেকে এটি আর সুন্দরভাবে
গুছিয়ে প্রকাশিত হবে এই প্রত্যাশা রাখি।
সবাই ভালো
থাকুন, সুস্থ থাকুন। এই অন্ধকার কেটে আবার পৃথিবী মুখরিত হবে আলোর কথামালায়।
আপাতত সেই অপেক্ষা।
No comments:
Post a Comment