বিশালগড়ে করোনাসুর
জয়তী ধর পাল
ঠক্ করে শব্দ হলো টেবিলে, আর ধক্ করে উঠল বিশালগড়ের মহারাজ চন্দ্রভানুর হৃদয়। সামনে ঠক্ করে যে চায়ের কাপটিও রাখা হয়েছে সেটি যতটা উষ্ণ, তার থেকেও বেশি উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে মহারানী রাজশ্রীর মস্তিষ্ক। ভোরবেলা থেকে এতক্ষণ রান্নাঘরে যারপরনাই নাস্তানাবুদ হয়েছেন তিনি। আলুর দমের জন্য আলু সেদ্ধ করতে গিয়ে প্রেসার কুকারের ঢাকনা লাগাতে পারেননি, ধৈর্যচ্যুত হয়ে নোড়া দিয়ে পিটিয়ে ঢাকনাটা লাগানোর চেষ্টা করেছেন, তাতেও ব্যর্থ হয়েছেন। পোলাও রান্না করতে গিয়ে ভাতের ফ্যান ঠিকঠাক ফেলতে পারেননি। পেঁয়াজ কাটতে কাটতে চোখে জল, সেই অবস্থায় ঝাপসা চোখে পরমান্নে চিনির পরিবর্তে নুন দিয়েছেন। হাতের ছ্যাঁকা খেয়ে এমন লাফিয়ে উঠেছেন, একটা তেলের শিশি উল্টে পড়েছে। আধ-সেদ্ধ আলু আর তেল মাখা রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে এক বুক কান্না নিয়ে মহারাজের জন্য চা করে এনেছেন তিনি।
মহারাজ নীরব থাকলেন। কারণ কথা বললেই এখন অগ্নিতে ঘৃতাহুতি হবে। চায়ে চুমুক দিয়ে মুখটা হাসি হাসি করার চেষ্টা করলেন, প্রেমপূর্ণ মধুর স্বরে মহারানীকে বললেন, "শ্রী, তোমার চা? তুমি চা খাবে না?"
যে ভয়টা এতোক্ষণ পাচ্ছিলেন, সেটাই হলো। রাগে ফেটে পড়লেন রাজশ্রী, "আমি আজ পর্যন্ত নিজে কখনো চা করে খেয়েছি? আমি...আমি খাব না চা ...! "
শেষ শব্দগুলোতে রাগের সাথে কান্না মিশে গেল। একথা সত্যি রানী রাজশ্রী সবসময় দাস-দাসী পরিবেষ্টিত হয়ে থাকতেন। সকালের ঘুম ভাঙ্গানো-চা থেকে রাতে ভালো ঘুম হওয়ার জন্য আয়ুর্বেদিক মতে বিশেষভাবে প্রস্তুত এক কাপ চা তার হাতে তুলে দিতো দাসীরা। মহারানীর মুখের দিকে তারা তাকিয়ে থাকতো চা'টি কেমন হয়েছে বোঝার জন্য, পরবর্তী হুকুম তামিল করার জন্য তারা সদাপ্রস্তুত থাকতো। রাজশ্রীকে শুধু কষ্ট করে ভাবতে হত, কোন কাজের দায়িত্ব কাকে দেবেন। সেই মহারাণীকে যদি আজ এই লকডাউনের দিনে নিজের জন্য চা করতে হয়, চা খেয়ে আবার চায়ের বাসন মাজতে হয় তাহলে চা খাওয়ার মতো বিরক্তিকর কাজের মুখে ঝাঁটা মারতে ইচ্ছা হয়। কিন্তু যা ইচ্ছা হয় তা তো সবসময় করা যায় না, তাই রাজশ্রী ঝাঁটা হাতে নিলেন পরবর্তী কাজ অর্থাৎ ঘরগুলো ঝাঁট দেওয়ার জন্য। ঘর তো নয় যেন একেকটি গড়ের মাঠ। এক করোনাসুরের অত্যাচারে বিশালগড়ের সবাই এখন গৃহবন্দী। সে 'কোভিদ নাইনটিন' নামের এমন এক অসুখ ছড়িয়ে দিয়েছে রাজ্য জুড়ে যে মহারাজকে সারা রাজ্যে লকডাউন ঘোষণা করতে হয়েছে। তাই দাস-দাসী পাত্র-মিত্র সভাসদ সবাই যে যার নিজের গৃহে বন্দী। আর মহারানী রাজশ্রী এই পয়ঁতাল্লিশ বছরের জীবনে যে কাজ কখনো করেননি...রান্না করা, বাসন মাজা, ঘর মোছা, কাপড় কাচা...সেই সব কাজ তাঁকে নিজে হাতে করতে হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই রাগ হতাশা এই অনুভূতিগুলোই সর্বক্ষণ রাজশ্রী কে ঘিরে থাকে। পঞ্চাশ বছরের মহারাজ চন্দ্রভানু অসহায়ভাবে শুধু তাকিয়ে দেখেন। জীবনে তিনি অনেক যুদ্ধ জয় করেছেন, অনেক শত্রুকে পরাজিত করে বন্দী করেছেন, কিন্তু এই করোনাসুরকে বন্দী করার কোন ফন্দি তাঁর মাথায় আসছে না। তাই কবিরাজের বিধান মত সবাইকে আপাতত সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আর নাসিকা ও মুখগহ্বরকে কাপড় দিয়ে ঢাকা আবশ্যক ঘোষণা করেছেন। সেই সাথে আরো কিছু নিয়ম বিধি মেনে চলার কথা ঘোষণা করেছেন রাজ্যজুড়ে। এই লকডাউন এর ফলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ছন্দপতন ঘটেছে রাজ্যের সর্বত্র। মহারাজের অন্দরমহলও তার ব্যতিক্রম নয়।
ঝাঁটা হাতে ঘর্মাক্ত মুখের রাজশ্রীকে দেখে খুব কষ্ট হল চন্দ্রভানুর। তিনি ধীর পায়ে গিয়ে দাঁড়ালেন রাজকন্যা ইন্দুমতীর মহলে। রাজকন্যা উদাস মুখে বসে জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছেন বাইরের সবুজ প্রকৃতির দিকে, বিষন্নতার ছায়া তার দুই চোখে। অষ্টাদশী রাজকন্যা ইন্দুমতীর শিল্পীমন খুবই সৌন্দর্যসচেতন। তার তুলির টানে যেমন রঙিন হয়ে ওঠে এই পৃথিবী, তেমনি সে সচেতন নিজের রূপচর্চার বিষয়ে। প্রতিদিন দাসীরা জবাফুলের কুঁড়ি বাটা, কেশত্থীপাতা বাটা, টকদই, মধু আরও কি কি যেন সব লাগিয়ে দিত রাজকন্যার চুলে আর একঢাল মেঘবরণ কেশের দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকত সবাই। নিয়মিত পরিচর্চিত দুই ভ্রূ যেন দুটি বাঁকা ধনুকের মত ছিল। দুধ-হলুদবাটা মাখানো দুধে-আলতা গায়ের রঙ আলো করতো রাজপ্রাসাদ। আর আজ? যত্নের অভাবে রুক্ষ চুলে জট, মোটা দুই ভ্রূ হারিয়েছে তার অপরূপ ভঙ্গিমা, দুধে আলতা রঙে যেন মরচে পড়েছে। নিজের এইরূপ আয়নায় দেখে মন খারাপ রাজকন্যার। মহারাজ কোমল স্বরে ডাকলেন, "মা, ইন্দু...।"
চমকে উঠলো আনমনা ইন্দুমতী। তারপর মুখ ঢাকলো, এই কুরূপ কাউকে দেখিয়ে কি লাভ! ফুঁপিয়ে উঠলো রাজকন্যা। মহারাজ সবই বুঝলেন, কিন্তু কোন সান্ত্বনা বাক্য খুঁজে পেলেন না।
নীরবে এসে দাঁড়ালেন রাজপুত্র রবিবর্মার মহলে। এই বুদ্ধিদীপ্ত ষোড়শবর্ষীয় বালকটিকে নিয়ে রাজা রানীর প্রচ্ছন্ন এক গর্ব আছে। কোন পরীক্ষায় কখনো দ্বিতীয় হয়নি রবি, সব সময় প্রথম। তার অদ্ভুত মেধা, উদ্ভাবনী শক্তিতে সবাই মুগ্ধ। শুধু রাজা-রানী নয় বিশালগড় রাজ্যে সব প্রজার গর্ব রাজপুত্র রবিবর্মা। বিদেশ থেকেও আমন্ত্রণ এসেছে উচ্চশিক্ষার জন্য। রবির উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা ভেবে রাজা রানী নিজেদের মন শক্ত করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাকে বিদেশে পাঠাবার। সেইমতো আয়োজন চলছিল। সব ঠিক থাকলে একমাস আগেই রবির বিদেশ চলে যাওয়ার কথা, এখন সেখানে উচ্চশিক্ষায় মগ্ন থাকার কথা। কিন্তু করোনাসুর সে পথও বন্ধ করে দিয়েছে। আশাহত রাজপুত্র মনের কষ্টে নীরব হয়ে গেছেন। মহারাজ দেখলেন নিজের পালঙ্কে ঘুমিয়ে আছে রাজপুত্র, চোখের কোলে কি এক ফোঁটা অশ্রু শুকিয়ে আছে! ঠিক বুঝলেন না...নিজের অশ্রুসজল চোখ নিয়ে ফিরে এলেন নিজের মহলে।
* * * * * * * * *
ভোরের সূর্যালোকে মহারাজ চন্দ্রভানুর প্রাসাদকে এক অপরূপ মায়ালোক মনে হচ্ছে। মহারাজের ঘুম ভেঙেছে অনেক আগেই। সত্যি বলতে কি, সারারাত তিনি ঘুমাতে পারেননি...কাছের মানুষগুলো যে বড় কষ্টে আছে! প্রাতঃভ্রমণের উদ্দেশ্যে তিনি রাজপ্রাসাদ সংলগ্ন উদ্যানে হাঁটতে লাগলেন। মালীরা মহারাজের নির্দেশে গৃহবন্দী, যত্ন করার কেউ নেই, তবু প্রকৃতি অপরূপ সাজে সেজে রয়েছে। সবুজে সবুজ চারিদিক পাখির কলকাকলিতে মুখরিত। হঠাৎ আধো অন্ধকারে দূর থেকে দুটি ছায়ামূর্তি দেখতে পেলেন। মহারাজের একটু ভূতের ভয় আছে আর ভয় পেলে রাম নামটা কিছুতেই মনে করতে পারেন না, শুধু ঘাড় মটকানোর কথাটাই মনে আসে। আগে হলে ওদিকপানে আর যেতেন না, একছুটে প্রাসাদে ঢুকে পড়তেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি অনেক কিছু বদলে দিয়েছে। অকুতোভয় চন্দ্রভানু ছায়ামূর্তি দুটি লক্ষ করে এগোলেন। কাছাকাছি পৌঁছে বিস্মিত হয়ে দেখলেন এত ভোরে তার পুত্র কন্যা বাগানে চুপচাপ বসে আছে...ওরাও কি সারারাত ঘুমায়নি ! মহারাজ ওদের পাশে গিয়ে বসলেন, "মা ইন্দু...।"
ইন্দুমতী চোখ তুলল পিতার দিকে, বড়ো করুন মায়াময় চোখ। মহারাজ বলে চলেন, "শুনেছি, ভোরের স্বপ্ন সত্যি হয়। জানিস মা, আজ কি স্বপ্ন দেখেছি? আমি স্বপ্ন দেখলাম, আমার ইন্দুমা'র স্বপ্ন সত্যি হয়েছে...সবাই অভিনন্দন জানাচ্ছে আমার ইন্দুমা'কে...তার তৈরি পোশাকের নতুনত্ব সবাইকে অবাক করছে...খালি টুথপেষ্টের টিউব দিয়ে তৈরি পোশাক...মা ঠাকুমার হাতের ডালবাটা দিয়ে তৈরি গহনা বড়ির পোশাক...সাবান দিয়ে তৈরি পোশাক... এত অদ্ভুত ধরনের পোশাক...আগে কেউ দেখেনি! হ্যাঁ রে মা, আমি স্বপ্ন দেখেছি, তুই অনেক বড়ো এক প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ পোশাক পরিকল্পনাকারী হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিস। "
একটু আলোর আভাস দেখা যায় ইন্দুমতীর মুখে। মহারাজ আবার বলেন, "তবে মা, তোকে একটু নতুনভাবে ভাবতে হবে। চেনা পথের ছক ভেঙে অচেনা পথে হাঁটতে হবে, তবেই তো আসবে সাফল্য। যেমন কাউকে সাজানোর গতানুগতিক পথে না গিয়ে অন্য কিছু ভাবতে হবে। হয়তো একটা মেয়ে ঠোঁট না রাঙিয়ে এত সুন্দর ছবি আঁকা একটা কাপড়ের টুকরো ঠোঁটের উপর বাঁধলো সবাই দেখে মুগ্ধ হলো, এই ধরনের নাক মুখ ঢাকা কাপড়ই হয়তো সাজসজ্জার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করল। ভাব মা, একটু অন্যরকম করে ভাব। নতুন কিছু কর। আমাদের যে প্রজারা আছে তাদের তুই নতুন ভাবে সাজা।"
মহারাজের কথাগুলো শুনতে শুনতে কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিল রাজকন্যা, স্বপ্নোত্থিতের মত বলে উঠলো, " হ্যাঁ বাবা, এবার নতুন করেই ভাববো...।"
রাজপুত্র রবি বর্মা নীরবে শুনছিল পিতা আর ভগ্নীর কথোপকথন। মহারাজ এবার ফিরলেন তার দিকে, মৃদু হেসে বললেন, "আমার ভোরের স্বপ্নে কিন্তু তুমিও ছিলে রবি।"
উৎসুক হয়ে উঠল রবিবর্মার দুটি বুদ্ধিদীপ্ত নয়ন। চন্দ্রভানু বলতে থাকলেন, "আমি দেখলাম সারা রাজ্যের লোক জয়ধ্বনি করছে আমার রবির...সে ধ্বনি দিকে দিকে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। এক অমোঘ অস্ত্র আবিস্কার করেছে তুমি! মহাপরাক্রমশালী এক অসুরকে নিধন করেছ সেই অস্ত্রে। তুমি বাঁচিয়েছো রাজ্যবাসীকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে। তাই জীবনের জয়ধ্বনিতে...তোমার জয়ধ্বনিতে ফেটে পড়ছে তারা। আকাশে বাতাসে ভাসছে শুধু বেঁচে থাকার বার্তা...খুশির বার্তা...যা লেখা হয়েছে তোমারই হাতে...। "
শুনতে-শুনতে মহারাজের স্বপ্নের ভিতরে যেন ঢুকে পড়ে রবি, শপথ করে, এই জীবনের জয়যাত্রা...এই বাঁচার বার্তা সে লিখবেই।
প্রাতঃভ্রমণ সেরে নিজের মহলে ফিরলেন চন্দ্রভানু। নিজে হাতে চা বানালেন রাজশ্রী আর নিজের জন্য। চা সাজিয়ে আসলেন অলিন্দে, যেখানে কাপড় কেচে শুকাতে দিচ্ছেন মহারানী। মহারাজের হাতে দুটি চায়ের কাপ দেখে তাঁর নয়নে ফুটে উঠল প্রশ্নচিহ্ন! মহারাজ বললেন, "শ্রী, আমি আজ তোমার জন্য চা বানিয়ে এনেছি। যেমনই হোক তোমায় খুশি হয়ে খেতে হবে কিন্তু।" সর্বক্ষণ রাজকর্মে ব্যস্ত মহারাজের এরূপ কর্মে বিস্মিত হলেন মহারানী। তার বিস্ময়ের মাত্রা বেড়ে গেল মহারাজের পরবর্তী প্রস্তাবে, "শ্রী, আমার একটা কথা রাখবে? মধুচন্দ্রিমায় গিয়ে তোমাকে আমি যে পোশাকটি কিনে দিয়েছিলাম সেটি পরে আসবে একবার? "বিস্ময়ের সাথে সাথে এবার ভয় পেলেন রাজশ্রী। এই করোনাসুরের চিন্তায় চিন্তায় মহারাজের কি মস্তিষ্ক বিকৃতির লক্ষণ দেখা দিল! মহারানী কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, মহারাজ তাকে থামিয়ে দিলেন, "আমার খুব ইচ্ছা করছে শ্রী, সেই পোশাকটিতে তোমাকে দেখতে। আমার জন্য পরে এসো একটিবার।"
এবার মহারানী আমতা-আমতা করে জানান, "সে পোশাক তো আমার অনেক দিনই আর গায়ে আঁটে না...মোটা হয়ে গেছি কিনা! "
নাছোড় মহারাজ বলেন, "দেখোই না একবার চেষ্টা করে।"
মহারানী আলমারি খুললেন। বহু যত্নে তিনি রেখে দিয়েছেন মধুচন্দ্রিমায় গিয়ে স্বামীর দেওয়া উপহারটি। ওটি আর এখন তার ক্রমবর্ধমান বপু ধারণ করতে পারে না বলে দুঃখ আছে মনের গোপন কোণে। দীর্ঘশ্বাস চেপে পোশাকটি নিলেন। আবারও অবাক হওয়ার পালা...পোশাকটি দিব্যি এঁটে গেল তাঁর শরীরে। আনন্দে চপল পায়ে অলিন্দে এলেন তিনি। মহারাজের প্রশংসা মিশ্রিত হাসিতে চোখ নামিয়ে নিলেন লজ্জায়।
মহারাজ মৃদু স্বরে বলেন, "এই লকডাউনে কাজ করতে করতে তুমি আবার আগের মতো রোগা হয়ে গেছো শ্রী।"
অধোবদনে থাকেন মহারানী। দুজনে চায়ের কাপ মুখে তোলেন। এক চুমুক খেয়েই বৈদ্যুতিক শক্ খেলেন মহারানী। একটু ভেবে বুঝতে পারলেন ব্যাপারটা, শুকনো নিমপাতার গুঁড়োকে চা পাতা ভেবে তাই দিয়েই চা বানিয়েছেন মহারাজ। ধীরে ধীরে দ্বিতীয় চুমুক দিলেন তিনি চায়ের কাপে। মহারাজ চায়ের কাপে চুমুক দিয়েই থু থু করে ফেলে দিলেন মুখ থেকে। চা এত তেতো কি করে হলো! রাজশ্রী হাসিমুখে তেতো চায়ের রহস্যটা বুঝিয়ে দেন মহারাজকে। রহস্যভেদের বিবরণ শুনে মহারাজও হাসতে থাকেন। তারপর রাজশ্রী কে প্রশ্ন করেন, "তুমি এত তেতো চা খাচ্ছ কী করে?"
রাজশ্রী লজ্জাজড়িত কণ্ঠে বলেন, "তুমি নিজের হাতে করেছ আমার জন্য...যতই তেতো হোক আমার কাছে খুব মিষ্টি।"
মহারাজ আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, "তুমি এখনো আমাকে এত ভালোবাসো শ্রী!"
দুই-একটি পাকা চুলের রুপালি রেখা মাথায় নিয়ে নববধূর মত লজ্জায় লাল হয়ে ওঠেন মহারানী...মহারাজ প্রথম প্রেমের দৃষ্টি নিয়ে সেদিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকেন। কোনো অসুরই বোধহয় পৃথিবী থেকে ভালোবাসাকে কোনদিন মুছে ফেলতে পারবে না।
* * * * * * * * *
পুনশ্চ : পাঠক-পাঠিকা, মহারাজ মহারানী দুজনকে এখন একটু একা থাকতে দিন। চলুন, আমরা রাজকন্যা ও রাজপুত্রের মহলে একটু উঁকি দিই। ওই দেখুন, রাজকন্যা ইন্দুমতী রঙ-তুলি-সূঁচ-রঙিন সুতো আর কত নতুন কাপড়ের টুকরো নিয়ে বসে গেছে...সে তার রাজ্যের প্রজাদের নাসিকা ও মুখগহবর আবৃত করার জন্য নতুন নতুন নকশা সমন্বিত বস্ত্রখণ্ড প্রস্তুত করছে...তার ঠোঁটের মধুর হাসি তাকে অপরূপা করে তুলেছে। আর ওই যে দেখছেন রবিবর্মার হাতে একটি কাচের পাত্রে সোনালী তরল...ওটা এক ধরনের তেল রবিবর্মার গবেষণাগারে এক বিশেষ ধরনের তেল প্রস্তুতের প্রচেষ্টা চলছে...যেটি গায়ে মাখলে চব্বিশ ঘন্টা পর্যন্ত করোনাসুর কাছে ঘেঁষতে পারবেনা। তেলটি আবিষ্কার হয়ে গেলেই সারাদিনে একবার ওটি গায়ে মেখে নিলেই কেল্লাফতে!
No comments:
Post a Comment