Friday, June 19, 2020

আমার বর্ষা - তৈমুর খান


আমার বর্ষা
 তৈমুর খান

 দেহপল্লব ছুঁয়ে বৃষ্টি নামছে 
                     চুম্বনে চুম্বনে
 হৃদয় উঠলে ওঠে আর এক 
                    হৃদয়ের গানে

 রাস্তা ভাঙতে ভাঙতে মেঘছায়ার বন
 আমার বিশ্রাম আজ অসম্ভব চঞ্চল
 এত ঢেউগুচ্ছ কার?
 বাতাসে ছুটে আসছে তির 
 মনের জানালা ভেঙে ঢুকে যাচ্ছে বিপ্লব
 দাহ ও স্নানের কাছে উড়ে যাচ্ছে নিবেদন 
রাখো তবে রাঙা পা দু'খানি
 আবার জাগুক সম্মোহন

 থই থই জলজ পথে সঙ্গম ভেসে যায়
 মর্মর ইন্দ্রিয় গানে উদাসীন সুর
 কে কাকে চমকায় বিহ্বল?
 নিকটও দূর মনে হয়

 সমস্ত জলের কান্না
 অথবা কান্নার জল
 ছাপিয়ে যায় আবেগের নদী
 হৃদয়ে হৃদয়ে ছড়িয়ে পড়ে জলীয় পরাগ

 সব কথা নাও তুমি, না বলা কথাও
 তির তির কাঁপে কথাজ্বর
 মেঘ-ভাষার গাম্ভীর্যে ভয় 
                          বজ্র নামায়
 চেতনাকে ডেকে ডেকে যায়া
           কোনো অতীতের পাখি
 পাখির ডানায় স্বপ্নের কারুকাজ
 মনে মনে তাকেও পরাই নীলাম্বরী

 অনুভূতিটুকুই ঐশ্বর্য আজ
 তাই প্রেম ধন 
 বর্ষামঙ্গলে লেখা দুর্নিবার সঙ্গম

 সাজাও সাজাও কল্পজল
 মুদ্রিত মন্দ্রিত হিয়ার সাঁতার প্রয়াস
 আদিম প্রণয় থেকে উল্লাসের চরে
জেগে উঠে স্বপ্নদ্বীপে আজও ডানা ঝাড়ে
 ভাঙন বিস্ময় নিয়ে নদী বাঁক্ নেয়
 তীরে আমাদের কৌতুক শিবির
 আলো জ্বালি বারবার 
 আলো নিভে যায় দুর্যোগের ঝড়ে

তবুও আঁধার বাঁশি বাজে
নৌকা দোলে
চিত্ত বৃত্তের মতো
পাক খায় অনন্ত শিবিরে

 বিষণ্ণ চাদরে ঢেকে রাখি এ-শরীর
 ভেজা গন্ধে মুকুলিত হতে হতে
 পর্দা সরে যায়
 আমি থাকি না কোনো
 নিবেদন প্রকাশ্য ঝাঁপায়

 ভাসমান দৈবের চোখে
 অলৌকিক নীলরশ্মি হেসে ওঠে
 জ্যোতির ঝিলিক টুকু দেখি 
 নিত্য মল্লার যায় পালতোলা নৌকায়
 দূরের গর্জনে আরশি ভেঙে পড়ে
 মুখ দেখা যায় নাকো আর

 মুখে কি কুসুমরাগ ছিল?
 কপট ছিল না কোনো
 নেশাতুর বৈরাগ্যে আঁকা বিশ্বাসের ঘর 
সেখানেই যেতে চেয়ে পাখা চায় অদৃশ্য ওড়ার

 সুপুরি গাছের বন থেকে কম্পন আসে
 হামাগুড়ি দেয় অন্ধকার
 ছলাকলায় ডোবে নিশীথের চাঁদ
 মেঘের তরীতে আলো যায়

 স্ফুলিঙ্গের অক্ষরগুলি রচনা করে মুখ
 মুখমন্ডল জুড়ে বয়ঃসন্ধির দাগ
 লাজুক আনত দৃষ্টি 
 ভেজা সংরাগ
 কত কথা ভাষা পায়নি আজও
 এ-বর্ষায় সেগুলিও ভাষা হতে চায়

 ভাষাপাখি মনের অরণ্যে লুকিয়ে থাকে
 ভাষাপাখি অনবদ্য জীবনের উষ্ণতা মাখে
 আজও তার ভাষা নেই
 স্তব্ধতায় নীরব গানের উচ্ছ্বাসে
 সেও দেখি ভিজে যায়

সামাজিক প্রত্যাশায় কখনো কি ডাকা যায় তাকে?
বিকল্প রাতের পরিধি জুড়ে সেও ওড়ে
গৃহবন্দনায় তার আবহমান ভয়
দুর্যোগে একা একা কাঁপে

 প্রত্যেক ক্ষণের কাছে অনুভূতির চোখ জাগে
 রঙিন বিপ্লব নেই, যোগ্য হয়ে কখনো ওঠে না
 নিহিত বেদনায় শুধু শূন্যতার মহাকাশে
 ভাসমান প্রস্তুতি তার দৃশ্য তৈরি করে

 নীল উৎসর্গ থেকে উৎসবের দিকে
চোখ ছলছল বৃষ্টি
 মায়ামাখা মমতায় কাহিনিরা উচ্ছল
 বর্ণিত জীবন চায়
 জীবনে জীবন যোগ হলে
 কাহিনিরা সৌভাগ্যের দরজা খুলে দেয়

 তবুও দূরত্ব বাড়ে দুরন্ত প্রলাপে
 বৃষ্টির অমোঘ বিন্দু বিষাদে গড়ায়
 নতুন চরকির ঘূর্ণনে
 আমাদের ব্যর্থ অভিমান ঘোরে
 এই বৃষ্টিতে পুড়তে থাকে
 এই শূন্যতায় বৃষ্টি কান্নার ক্রিয়া
 অন্বেষণে খুলে দেয় নিগূঢ় হিয়া।


 তৈমুর খান

No comments:

Post a Comment