Thursday, June 25, 2020

ছোটোগল্প - মানস সরকার


পরিযায়ী
মানস সরকার

পেয়েছি, মৌলীর গলায় বাড়তি আত্মবিশ্বাসের ছোঁয়া। সেলটা ডেস্কের উপর রেখে লাউডস্পিকারটা অন্‌ করল সপ্তর্ষি। আর দু’ঘন্টা বাদেই প্রেজেন্টশ্‌ন। গ্রুপ প্রোডাক্ট ম্যানেজারের ঘরে। ল্যাপটপে সতর্ক চোখের সাথে কি-বোর্ডেও আঙুলকে ব্যস্ত রাখতে চাইল সপ্তর্ষি। আগের কনফারেন্সটায় অরনিডাজলের মলিকিউলটার নাম’এর ব্যাপারে কথা উঠেছিল। এবারে সেটুকু খামতিও রাখবে না। নিফাডল না নিডল – কোম্পানীর আদ্য অক্ষর ব্যবহার করে প্রোডাক্টের নাম রাখাটা বেশি ক্যাচি – চিন্তা পাক দিয়ে ওঠে ভেতরে......
    একটু পরে করব কি, ঘড়ির কাঁটা বাড়তি ঘুরতেই মৌলীর গলায় উত্তাপের পরশ।
    সপ্তর্ষি ব্যস্ততার খোলস থেকে বেরিয়ে আসতে চেষ্টা করে। মৌলী ওর অফিস স্টাফ নয়। ছ’মাসের বিয়ে করা বউ।
    না, না, বলো।
    বলছি, জায়গাটার নাম বের করেছি।
    মনে পড়েছে সপ্তর্ষির। কাছে পিঠে একটা সি স্পট খোঁজার কথা হচ্ছিল কাল রাতে খেতে বসে। সি স্পটটা অবশ্য মৌলীর ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়েইনইলে সপ্তর্ষির পাহাড়কেই বেশি রহস্যময় মনে হয়। মন্দারমণি বা দীঘায় বেশ কয়েকবার কনফারেন্সে গেছে। লোকজনের ভিড়ে জায়গাগুলোয় এখন সারা বছরই মেলা লেগে থাকে। গোপালপুরটা একটু ফাঁকা পাওয়া যায়। কিন্তু ওড়িশার যে কোনও জায়গাতেই দু’তিন দিনের বেশি লেগে যাবে। সেটা আবার সপ্তর্ষির পক্ষে বেশ শক্ত। ওয়ার্ক প্রেসার এখন মারাত্মক জায়গায়। তিনমাসের মধ্যেই কোম্পানী চারটে নতুন প্রডাক্ট লঞ্চ করতে চলেছে। বিয়ের পর ছ’ছটা মাস কেটে গেলেও মৌলীকে নিয়ে সেভাবে কোথাও ঘুরে আসতে পারেনি। মধুচন্দ্রিমার মধু’র স্বাদ চিনির দানায় মিটিয়েছে ওদের নিজেদের হরিশ পার্কের ফ্ল্যাটে।
    বলো, দীঘা বা পুরীর নামটা শোনার অপেক্ষায় রইল সপ্তর্ষি।
    বকখালি।
    কী!
    বকখালি।
    গ্রেট। ডায়েরিতে সম্রাট ট্রাভেলস’এর ফোন নাম্বার আছে। হোটেলটা বুক করে ফ্যালো।
    ও প্রান্ত চুপ। এ প্রান্তে তখন আরও দ্রুত আঙুল চলছে কি-বোর্ডে। পলকে থামে সে আঙুল। প্রায় যন্ত্রের মতো নড়ে ওঠে নিফার ইন্ডিয়া প্রডাক্ট এক্সিকিউটিভ’এর ঠোঁট, - দিন দু’য়েকের বেশি যেন বুকিং কোর না।
    ও প্রান্ত এখনও চুপ। লাউডস্পিকার দিয়ে দীর্ঘশ্বাসের ঝড় ভেসে আসে। ফোনটা কেটে যাওয়ার আওয়াজ শোনা যায়। এক মুহুর্তের জন্য কি-বোর্ডে চলতে থাকা আঙুল শ্লথ হয়। তারপরই যেন ঘোর কাটিয়ে হাতে আরও গতি আসে। ভয়াভহ গতি। ঝড়ের গতি। যন্ত্রকেও হারিয়ে দেওয়ার। সব কিছুকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার গতি। আর ক্রমশ একা হতে থাকার সমীকরণ......

(২)
গিয়ারে পড়তেই গাড়ি যেন পক্ষীরাজ। ডায়মন্ড হারবার রোডের দু’ধারে অসংখ্য দোকান। তারই একটাতে গাড়ি থামিয়েছিল সপ্তর্ষি। সকালে দু’দুবার চা খাওয়াটা অভ্যেস। হোস্টেল থেকেইপ্রথমবারের চা’টা ফ্ল্যাটেই খেয়েছিলসকালে। এখানে দ্বিতীয়বারের চায়ের সাথে ব্রেকফাস্টটাও সেরে নিল ওরা দু’জনে। মৌলী আপত্তি তুলেছিল। শোনেনি সপ্তর্ষি। কাকদ্বীপ পৌঁছতেই এগারোটা বেজে যাবে। ওখান থেকে নামখানা। মধ্যিখানে কোথাও থামার ইচ্ছে নেই।
    অল্টোটা সপ্তর্ষি নিয়েছে বিয়ের আগেই। ড্রাইভার হিসেবে অনেকের কাছ থেকেই প্রশংসা কুড়িয়েছে। তারমধ্যে মৌলী একজন। ব্যান্ডেল থেকে, মাঝেমধ্যেই ভেসে আসে মা’এর সাবধানবাণী, ‘সাবধানে চালাবি কিন্তু।’ গাড়ি নিয়ে বেড়াতে যাচ্ছে শুনেই মৌলীকে উপদেশের একটা লিস্ট ধরিয়ে দিয়েছে। কলকাতায় এসে থাকলেও মা যে ব্যান্ডেলের বাড়িতেই বেশি থাকতে চায়, এটা বোঝে সপ্তর্ষি। বাবার স্মৃতি একটা কারণ। মাঝে মধ্যে মা’এর জন্য যে চিন্তা হয় না, তা নয়। কিন্তু চিন্তাটা লাঘব করেছে মিনতি মাসি। মা’এর সঙ্গে শুধু থাকে, তাই নয়। মা’কে নিজের দিদির থেকেও বেশি কিছু দেখে। গড় গড় করে কেরিয়ারের পথে এগোতে নিজেকে বাধাহীন লাগে।
    সপ্তর্ষির পাশেই বসেছে মৌলী। পিছনের সিটে মালপত্রলাগেজের পরিমাণটাও একটু বেশি মনে হচ্ছে। সপ্তর্ষি কিছু বলেনি। ট্রিপটা হনিমুনই। রাতেও দু’একটা পোশাক ভাঁজ করতে করতে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিল মৌলী, - দ্যাখো না, এই ইমপেরিয়াল ব্লু সালোয়ারটায় আমাকে ভাল লাগবে? সামনের খোলা ফাইলটা থেকে মুখ না তুলেই সপ্তর্ষি জবাব দিয়েছিল, - হুঁভীষণ। মুখের উপর ছুঁড়ে মৌলী সালোয়ারটা মারতেই বোধগম্য হয়েছে, রংটা আসলে অফ হোয়াইট ছিল। মৌলী এরকমই। নিউআলিপুরের মেয়ে। ওর বোন বলে, - দিদি কুছ খাট্টি, কুছ মিঠি। খাট্টা স্বাদ পেয়েছে সপ্তর্ষি। মিঠার তেষ্টাটা গলায় যেন আটকে। চুল অল্প অল্প উড়ছে মৌলীর। কাঁচ নামিয়ে রেখেছে দু’জনেই। সূর্যের আলো চুলেতে বাদামি রঙের স্যাডো তৈরি করছে। ‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা।’ চুলের আশ্রয়েই কি সব কবির হাজার বছরের হাঁটা শেষ হয়! সপ্তর্ষির হাঁটাটা ঠিক কত বছরের....... একটু রোমান্টিক হবার চেষ্টা করল।
    মৌ, ওখানে গিয়ে জিনসটা একটু পোরো। হ্যান্ডিক্যামটা দিয়ে একটু শুট করব।
    হুঁ, অন্যমনস্ক গলা মৌলীর।
    কালারটা ডেনিম না?
    হ্যাঁ, তোমারটাও নিয়েছি
    হেসে ফেলে সপ্তর্ষি। বলে, - ভুঁড়িটা দেখেছ।
    সপ্তর্ষির হাসি মৌলীর মুখেও ছড়িয়ে পড়েছে। গালের টোলগুলো স্পষ্ট হচ্ছে। হাওয়াটা মিষ্টি হয়ে আসছে। মধুচন্দ্রিমার মধু জমে উঠছে কি...........
    সেল বাজছেআওয়াজটা কর্কশ। রাস্তার একপাশে গাড়িটা দাঁড় করাল সপ্তর্ষি। ফোন অন করতেই গলাটা যেন মুহূর্তেই ওকে গিলে ফেলল। মিঃ নটরাজন। জি.এম., মার্কেটিং।
    হেলো, ক্যান আই স্পিক টু সপ্তর্ষি বাসু, প্লিজ?
    মর্নিং স্যর, সপ্তর্ষি রিপোটিং ফ্রম কলকাতা...
    মর্নিং বাসু।                     
    অল্প থেমে প্রশ্ন করেন মিঃ নটরাজন, উইল য়্যু ফেভার মি এ্যা থিং?
    মৌলীর দিকে তাকিয়ে একবার ঠোঁটটা চেটে নেয় সপ্তর্ষি। মাথা নিচু করে বসে আছে। সপ্তর্ষি বলে, - সিওর স্যর।
    দেন সেন্ড দ্য প্রিভিয়াস অরনিডাজল প্রডাক্ট পোর্টফলিও ওভার মাই ফ্যাক্স নাম্বার
    বাট্‌ স্যর, দ্য ফাইল ইস অলরেডি উইথ মিঃ আচারইয়া।
    অ্যারেঞ্জ সামথিং।
    বাট্‌...
    লাইন কেটে গেছে।
    সান্‌ অফ অ্যা..., সপ্তর্ষি গুম মেরে যায়।
    নিস্তব্ধতাকে সরিয়ে রেখে মৌলী ঝলমল করে ওঠে। বলে, - গাড়ি ঘোরাবে না কি? উত্তর দেয় না সপ্তর্ষি। কিছু একটা...... কিছু একটা...... ফোনবুকে মিঃ আচার্যর নাম্বারটা খুঁজে দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
    বকখালি পৌঁছতে পৌঁছতে বিকেল হয়ে গেল। অথচ দুপুরের মধ্যেই ঢুকে যাবে ভেবেছিল সপ্তর্ষি। অনেক চেষ্টায় মিঃ আচার্যর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছে। কনভিন্স করে, প্রডাক্ট পোর্টফলিওটা মিঃ আচার্যকে দিয়ে পাঠিয়ে দিতেও পেরেছে। কিন্তু এখনও একটা ফ্যাক্স পাঠাতে হবে। হোটেলে মৌলীকে ঢুকিয়ে দিয়ে ফ্যাক্স সেন্টার খুঁজতে বেরোল। বকখালিতে পাওয়ার অফ হওয়ার বিচ্ছিরি প্রথা আছে। ভাগ্যক্রমে সব ম্যানেজ করে ফেলতে পারল। তখন সন্ধের অন্ধকার সবকিছুকে ঘিরে নেমে আসছে।
    রুমের কলিংবেল দিতে আধমিনিটের মধ্যেই দরজা খুলল মৌলী। চান করে পিঠে ছড়িয়ে দিয়েছে একরাশ চুল। সালোয়ার ছেড়ে ম্যাক্সি গলিয়েছে। ম্লান হেসে ঘরে ঢুকল সপ্তর্ষি। মৌলী বোধহয় বুঝেই গেছে, আজ আর কোথাও যাওয়া হবে না। ক্ষিদে ক্ষিদে পাচ্ছিল। পথে লাঞ্চটাও ঠিক করে করা হয়নি। রুম সার্ভিসকে ফোন করে খাবার অর্ডার দিল। তারপর চান করতে ঢুকল। সারাদিনের ধকল কাটাতে চান আর ঘুমের বিকল্প নেই।
    বাথরুম থেকে বেরতেই অবাক সপ্তর্ষি। এসি চলছে। টিভিও। রুম সার্ভিস খাবারটাও দিয়ে গেছে। মৌলীকে দেখতে পেল না। গায়ে তোয়ালেটা জড়িয়ে খাটের পাশের দরজাটা খুলে জমাট অন্ধকারের মধ্যে ব্যালকনিতে মৌলীকে আবিস্কার করল। একটু ঝুকে রেলিঙে সাপোর্ট রেখে দূরের আলো-আধাঁরিতে তাকিয়ে আছে। পিঠে সপ্তর্ষি হাত রাখতেই একটু শক্ত হয়ে যায়। ধীরে ধীরে সপ্তর্ষির হাত মৌলীর চুল, চুল থেকে গালে চলে যায়। চমকে ওঠে সপ্তর্ষি ওর চোখ, গাল ভেজা। এখনও জল নেমে আসছে গরম কিন্তু ভীষণ নরম। ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে উঠছে। মৌলী এই ছ’মাসে যা বলেনি, সেসব শব্দ নিজের ভেতর শুনতে পাচ্ছে। ভেতরের অনেক গতিকে থামিয়ে শব্দগুলো সপ্তর্ষিকে স্তব্ধ, শান্ত করে তুলছিল। আর ফ্যাল ফ্যাল করে ওদের দু’জনের দিকে তাকিয়েছিল অন্ধকার। 
(৩)
খুব সকালেই ঘুমটা ভেঙে গেল সপ্তর্ষির ঘরের এসি অফ্ তার মানে মৌলী ভোররাতে উঠেছিল। তখনই অফ করেছে। এখন পাশে শুয়ে অকাতরে ঘুমোচ্ছে। ঘর এখনও বেশ ঠান্ডা।
    কাল রাতে খাওয়া দাওয়ার পর বেশ আড্ডার মুডে এসেছিল ওরা দু’জনে। আর একটু বেশি সাহচর্য কি মৌলী চাইছিল! সপ্তর্ষির মন খারাপ হয়ে গেল। কথা বলতে বলতেই চোখ যেন বুজে আসছিল। আসার আগের দিনও অনেক রাত ওবধি জেগে কাজ করেছিল। মাত্র দু’টো দিনের ছুটিতে আসার জন্য যা কাজ করতে হয়েছে, ভাবা যায় না। সামনের বছরেই কলকাতা অফিস থেকে একজনকে অন্তত হেডঅফিসে প্রমোশন দিয়ে নিয়ে যাবে হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলমেন্ট। সেই একজনটা ওকেই হতে হবে। এমনটাই ভেবে রেখেছে। মুখ বুজে তাই ওয়ার্কলোডটা নিয়ে যাচ্ছে। সবথেকে বড় কথা, এই গ্রাউন্ডে হেড অফিসের কাউকে ও চটাতে চায় না।
    একটু অলস লাগছে। বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করছে না। তাও উঠল। হোটেলে পড়ে থাকবে বলে নিশ্চই ছুটি নেয়নি। চারপাশটা ঘুরে দেখার লোভ কাজ করছে ওর মধ্যে। একটু ঘুরে আসা বালুকা বেলায়। বকখালির সাগর শুনেছে শুন শান। মগ্ন থাকে অন্য ধ্যানে। জানলার পর্দা সরাতেই কাঁচের ওপাশের স্নিগ্ধতা সপ্তর্ষিকে কাছে ডাকে। পায়ে পায়ে বেড়িয়ে পড়ার এক অদৃশ্য ইঙ্গিত ছুঁয়ে যায়। পিছন ফিরে মৌলীকে ভাল করে দেখে সপ্তর্ষি। সাগরের স্নিগ্ধতা আর মাধুর্যতা ওর চোখে মুখে ছড়িয়ে। বিয়ের ছ’মাসে এই প্রথম মৌলীকে এত নির্জনে। অবিন্যস্ত চুল গালে, কপালে। প্রেমের ওম। ডেকে তুলবে? হেঁটে যাবে কি একবার দু’জনে নীল নির্জনে? পারল না...... ভীষণ মায়া হচ্ছে মৌলীকে দেখে। মনে হচ্ছে, ভোরের সুখ স্বপ্নে আচ্ছন্ন। তাছাড়া রোজই তো প্রায় সকালেই ওঠে। ওর অফিস, রান্না, টিফিন। সকালের চা’টা ওবধি সপ্তর্ষি বিছানায় পেয়ে যায়। কিন্তু এই মুহূর্তে বাইরেটা বড় টানছে...
    দরজাটা ভেজিয়ে বেরিয়ে আসার সময় একটু অনিশ্চিত লাগল। রিসেপশনে নেমে অবাক সপ্তর্ষি। আগের দিনের ছেলেটি একমুখ হেসে ওকে গুড মর্নিং জানায়। হেসে দাঁড়িয়ে পড়ে সপ্তর্ষি। ছেলেটি জানতে চায়, - সানরাইস স্যর? ঘাড় নেড়ে সপ্তর্ষি বলে, - ম্যাম থাকলেন।
    চিন্তা করবেন না। আপনি ঘুরে আসুন।
    এত সকালে কলকাতায় কোনওদিন ওঠে না। ট্যুরে যাবার জন্য তাড়াতাড়ি উঠলেও এত ভোরে ওঠা হয় না। হাঁটছে। বালুরাশি মাড়িয়ে নতুন পৃথিবীতে প্রবেশ করছে। ভোরের গন্ধের সাথে সমুদ্রগন্ধ মিলেমিশে একাকার। সাগরের খুব কাছে চলে আসে। বাতাসের বওয়া আর ঢেউ’এর আছড়ে পড়ার মধ্যে মুক্তির গন্ধ পাচ্ছেএমনকি আঁশটানি গন্ধটাও প্রকৃতির বড় নিজস্ব। তাই মোটেও বেমানান নয়। দূরের ঝাউবীথি ভোরের বাতাসে মাথা দোলাচ্ছে। প্রমোশনের লোভে নয়। সপ্তর্ষিকে যেমন হামেশাই দোলাতে হয়।
    আশেপাশে কাউকে তেমন নজরে পড়ল না। সাগরের বেশ কিছুটা দূরে দু’টো কালো বিন্দু। নিশ্চই মাছ ধরার নৌকো। আকাশ এখনও সোনালি আবির মাখেনি।  
    বেশ কিছুটা এগিয়ে এসে থামে সপ্তর্ষি। আশেপাশে তাকায়। সিমেন্টের বেঞ্চ করে রেখেছে ট্যুরিজম কর্তৃপক্ষ কিছুদূর অন্তর। একটাতে বসে। টিশার্টটা পত্‌ পত্‌ করে উড়ছে। মাথার চুল বাতাসের সঙ্গেই ডানা মেলতে চাইছে। সৃষ্টির আদিতে চলে যাওয়া। মাথার উপরে আওয়াজ্‌ হতে চোখ তুলে তাকাল সপ্তর্ষি। দু’টো পরিযায়ী পাখি। নিজেদের মধ্যে অদ্ভুত খুনসুটির খেলায় মেতেছে। প্রেমের নিজস্বতা না কি এরকম পরিবেশেই প্রেম মুক্তি পায়। নিজের আকার নিয়ে গড়ে উঠতে থাকে।
    গোটা পরিবেশটাকে ছত্রভঙ্গ করে দিয়ে হঠাৎই বেজে ওঠে সপ্তর্ষির সেলফোন। পরিযায়ী পাখি দু’ট সরে যাচ্ছে দৃষ্টি থেকেপকেট থেকে ফোনটা মুঠোয় আনতে স্ক্রিণে মিঃ নটরাজনের নাম্বারটা নজরে আসে। হাওয়া আর সাগরের ছন্দে বেমানান হয়ে উঠতে থাকে রিংটোনটা। চোয়াল দু’টো শক্ত হয়ে আসে সপ্তর্ষির।
    পরিযায়ী পাখি দু’টো সপ্তর্ষির দৃষ্টিতে ফুটে ওঠে। বেজেই যায় ফোন। দূরে হেঁটে আসতে থাকা মৌলী তখন ক্রমশই কাছে......

মানস সরকার

No comments:

Post a Comment