বাড়িয়ে দাও তোমার হাত
গীতা খাঁড়া
সকাল গড়িয়ে বিকেল হল, অর্পিতার কলেজ পড়ুয়া ছেলে বিতান ঘরে ফিরল না। স্বামী স্ত্রী দুজনে ঘরবার হচ্ছিলেন। হঠাৎ কলিংবেলটা বেজে উঠল। বাবা দরজা খুলে দেখলেন, বিধ্বস্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে বিতান।
সারাদিন কোথায় ছিলি? জিজ্ঞেস করলেন মা।
কোনো কথা না বলে বাথরুমে ঢুকে গেল সে। স্নান করে বেরুতেই বাবা বললেন, কীরে মার কথার উত্তর দিলি না?
ও পাড়ার ভটচায জেঠুরা খুব বিপদে আছেন বাবা।
কেন কী হয়েছে?
উনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। চিকিৎসা হয়ে সুস্থ হয়ে গেছেন। বাড়ি ফিরতেই পাড়ার লোকেরা ঘরে ঢুকতে দিচ্ছেন না। এমন কি সুস্থ জেঠিমাকেও ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। কী অসহায় অবস্থা! খাবার নেই, ঔষধপত্র সঙ্গে নেই, জলটুকুও কাছে নেই। স্কুলের বারান্দায় বসে দুজনে কাঁদছেন।
মা বললেন, তাতে তোর কী? সবাই যা ভালো বুঝেছে তাই করেছে। এসব রোগীর কাছে যেতে নাই, ছুঁতেও নেই।
না মা, এখন তো ওদের পাশে বেশি করে থাকতে হয়, মনোবল বাড়াতে হয়।
যে যাই করুক তুই মোটকথা যাবি না।
সমাজ থেকে এই মনোভাব দূর করতে হবে। মানুষকে বোঝাতে হবে রোগীকে অস্পৃশ্য ভাবার কোন কারণ নাই। একটু সাবধানে থাকতে হবে এই যা। এমনি করে দূরে সরে গেলে তো চলবে না। আজ এ-বাড়ি কাল ও-বাড়ি করে পাড়ায় সব বাড়িতে একদিন হতে পারে। তখন মানুষ কী করবে? মানুষকে বাদ দিয়ে তো সমাজ নয়? সকলের বিপদে সবাই পাশে থাকবে একথা বুঝতে হবে। মন থেকে ভয় দূর করতে হবে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দেখা যায় সাধারণ মানুষ থেকে ডাক্তার, নার্স, ও স্বাস্থ্যকর্মীদেরও এমন হেনস্থা হতে হচ্ছে। সবাই মিলে আমরা যদি উদ্যোগ নিই, মানুষ একদিন নিজেদের ভুল বুঝতে পারবে।
আচ্ছা মা, আজ যদি বাবা অসুস্থ হতেন আর আমাদের এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হত তাহলে তোমার কেমন লাগত? সবাই উপহাস করে দূরে সরিয়ে দিলে তুমি সহ্য করতে পারতে?
তোরা কিছু করতে পারলি? বাবা জিজ্ঞেস করলেন।
আমি, প্রীতম ও শৈল্পিক সারা সকাল পাড়ায় সবাইকে নিয়ে বসেছি। কিছু মানুষ তো বুঝেছে। জেঠু জেঠিমাকে ঘরে পৌঁছে দিয়েছি। পাড়ায় স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করে, জেঠুদের যাবতীয় প্রয়োজন মেটাতেই দেরি হয়ে গেল।
মা নিজের ভুল বুঝতে পারলেন। ছেলেকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমো দিয়ে বললেন, ভবিষ্যতে মানুষের জন্য এরকম অনেক ভালো কাজ করিস বাবা। তাঁর দুচোখে জল, বাবার মুখে তৃপ্তির হাসি। হঠাৎ ফোনের রি়ংটোন টা বেজে উঠল---
আকাশ আমায় ভরল আলোয়
আকাশ আমি ভরব গানে।
খুব ভালো।এই রকম চিন্তা ভাবনা সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ুক
ReplyDeleteখুব ভালো।এই রকম চিন্তা ভাবনা সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ুক
ReplyDelete