মূল্য
পারমিতা মণ্ডল
রিক্সা চালিয়ে যেটুকু টাকা আসতো রমেন মদ খেয়েই অর্ধেক উড়িয়ে দিত। মধ্যরাতে বাড়ি ফিরে বৌকে পেটাতো। এখন আর এসবের উপায় নেই। যবে থেকে লক ডাউন হয়েছে তবে থেকে রোজগার বন্ধ।টোটোর জন্য আগে থেকেই রোজগার কমে এসেছিল। তার ওপর করোনার দয়ায় সোনায় সোহাগা। ঘরে কোনোদিন হাঁড়ি চড়ে তো কোনোদিন জলই হয় পেট ভরানোর রাস্তা। রাতে ঘুম আসে না রমেনের। ওর বৌ শান্তির চোখ এড়ায় না। একদিন সাহস করে জিজ্ঞেস করেই ফেলে শান্তি
কিগো, সুমিতের বাপ! কি এতো ভাবো?
কী আর ভাবব! এতোদিন যাহোক করে ছেলেটার মুখে দুটো ভাত উঠছিল। আমি তো কিছুই কোনোদিন দেখিনি। এখন ভাবি রোজগারের মূল্য কত!টাকা না থাকলে কি জ্বালা! কত পয়সা আমি নেশা করে....এই বলে শান্তির হাত দুটো ধরে রমেন বলে, আর কোনোদিন নেশা করবো না। পেটাবো না তোকে।
শান্তি এসব শুনে যেন আকাশ থেকে পড়ে। এ-যে ভুতের মুখে রাম নাম! মুচকি হেসে শান্তি বলে
একখান কতা বলি?
বল কি বলবি?
ওই যে দত্ত বাড়ির সরলা বৌদি আচে না!ও একটা কাজের কতা বলছিল।
কী কাজ?
ওই যে মাক্স বানানোর কাজ। বৌদি কয়েকজনকে নিয়ে ওই কাজ করবে। কাজ ভালো হলে টাকা দেবে। আমি করবো কাজটা?
অনুমতি চাইছিস বৌ! তোকে কত কষ্ট দিয়েছি। এখন তো আমি বেকার! কী বলবো বল!তোর ইচ্ছে হলে কর।
কয়েকদিন পর রমেন সবে ভাত চড়িয়েছে। শান্তি কাজ থেকে বাড়ি ফিরে হাসতে হাসতে রমেনের কাছে ছুটে আসে।
সুমিতের বাপ! ও সুমিতের বাপ!
আরে কি হলো বলবি তো!
বৌদি একটা কতা বলেচে।
কী কথা?
বলেচে যদি তুমি রাজি থাকো তাহলে ওই মাক্স গুলো দোকানে দোকানে তোমার রিক্সা করে ডেলিবারি পাটাবে।
তাই!
হ্যাঁ গো! তবে নেশা করলে চলবে না।
কোনোদিন না বৌ।
আনন্দে দুজনের চোখ চকচক করে। শান্তি পায় সুন্দর একটা মানুষ ও রমেন পায় রোজগারের মূল্যের স্বাদ।
No comments:
Post a Comment