Tuesday, September 22, 2020

আঁধারে আলো - প্রাণনাথ শেঠ

 আঁধারে আলো

প্রাণনাথ শেঠ

 

এক অদ্ভুত অসহনীয় অবস্থার মধ্যদিয়ে চলেছি আমরা অদৃশ্য, অতি অতি ক্ষুদ্র এক ভাইরাস কণা (কোভিড-১৯) বিশ্বব্যাপি কায়েম করেছে সন্ত্রাস-রাজ কোটি কোটি মানুষ আজ জর্জরিত তার বিষ-থাবায় ইতিমধ্যে কেড়ে নিয়েছে কয়েক লক্ষ্য অমূল্য প্রাণ বিজ্ঞানের চরমতম উৎকর্ষতার বিজ্ঞাপনের দিনে এক কয়েক-মণি চপেটাঘাত! ভীত সন্ত্রস্ত অসহায় মানুষ বাধ্য হয়েছে ঘরবন্দি থাকতে কিন্তু কতদিন চলতে পারে এই দমবন্ধ করা ঘরেন্টাইন প্রক্রিয়া কাজ-কর্ম বন্ধ, আয় উপায় নেই, কিভাবে চলবে ক্ষুণ্নি-বিত্তি!

    এই মুহূর্তে আড়াআড়ি বিভাজনে দু'দল মানুষ পরস্পর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে হ্যাভ এবং হ্যাভ নট একদিকে বিত্তশালী মানুষ জন--বড় বড় ব্যবসায়ী-স্থায়ী চাকুরি জীবী, অন্যদিকে আর সবাই এক অকল্পনীয় অবিশ্বাসের বাতাবরণের মধ্যে এখন আমাদের দিন-গুজরাণ সভ্যতার এক আঁধারতম পর্যায়

    জীবনকে ভালোবাসা-বাসীর মানুষরা হাত-পা ছুঁড়ে নেমেছে এই তমোসার জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসার কঠিনতম লড়াইয়েআর্ত মানুষের পাশে থাকতে কমবেশি লড়ছে সবাই

    অপর দিকে, সাতে-পাঁচে না থাকা, উঠোন থেকে না নামার দলও চক্ষু লজ্জার ভয়ে অথবা প্রচারের আলোয় ঝলসাতে মহানুভবতার প্রদর্শণের জন্য  আওড়াচ্ছে জীবে প্রেম বিতরণের মহান বুলি!

    এক কেজি আলু-এক কেজি চাল-আর আধ কেজি ডাল-এর বিনিময়ে সোস্যাল মিডিয়ায় তাই নির্লজ্জ ভাবে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে মানবিকতা, দারিদ্র্য

    শুধুমাত্র পেটের জ্বালা মেটাতে গিয়ে মান-সম্মান জলাঞ্জলি দিতে বাধ্য হচ্ছে আমাদের আত্মার আত্মীয়রা বড় লজ্জা, বড় অন্ধকারময় সংকটকাল আমাদের!

    ঘন অন্ধকারেও যেমন জোনাকিরা ছিন্নভিন্ন করে দেয় আঁধারের অমানিশা, তেমনি মানবসভ্যতার এই সংকটকালে বেশকিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, একক ব্যক্তিত্ব নীরবে এসে দাঁড়িয়েছে অসহায় মুমূর্ষু মানুষের পাশে এরা হয়ত সংখ্যায় নগন্য কিন্তু মানব সভ্যতার ইতিহাসে এরাই জ্বেলে যাচ্ছে  সুমহান আলোকবর্তিকা এদের হাতেই একমাত্র সুরক্ষিত আগামীর সলতে

    করোনা মহামারী চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে আমাদের অহমিকার অসারতা, চাকচিক্যময় ইমারতের নড়বড়ে ভিতের অসহায়তা খসে পড়ল কত-রকমের মুখোস সরে গেল কত আড়াল বে-আব্রু হল অমোঘ সত্য

    সাহিত্য-সংস্কৃতির জগতেও উলোটফের! টলমল হয়ে পড়ল কত ব্যবসায়িক ভেকধারী সাহিত্যিকের আসন দেখা গেল কত দাদা-দিদিভজা কলমচিদের দাঁতনখ এই সংকট কালেই উদ্ভাসিত হল কত আশ্চর্য তুলি-কলম -সবই দলিল হয়ে গেল আগামীর কাছে

    যখন দেখি আম্ফান বিধ্বস্ত অসহায় ধিবর পরিবারের  পাশে দাঁড়াবে বলে সম্পূর্ণ একক প্রচেষ্টায় লঞ্চ ভাড়াকরে Jhorer Pakhi- মতো কেউ কেউ ত্রাণ-সামগ্রী নিয়ে পৌঁছে যায় অসহায়দের পাশে, তখন চোখের কোণ চিকচিক করে উঠে বৈকি!

    যখন দেখি হলদিয়া আনন্দধারা পরিবারের মানবিক মুখ 'আনন্দ সাথী' বন্ধুরা করোনা আক্রান্ত পরিবারের পাশে গিয়ে দাঁড়ায় নিঃস্বার্থভাবে, তখন সত্যি সত্যিই বলতে ইচ্ছে করে - পৃথিবীতে এখনও ভালোবাসা সহমর্মিতা কিছু হলেও টিকে আছে

    যখন দেখি জন্মান্ধ সৌমশিস (সামন্ত) সমস্ত রকম প্রতিকূলতা অগ্রাহ্য করে ফোন কনফারেন্সে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষদের নিয়ে একের পর এক উদযাপন করে চলে রবীন্দ্র জয়ন্তী, নজরুল জয়ন্তী, শিক্ষক দিবস পণ্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ-এর জন্মদিন, মান্না দে স্মরণে অনুষ্ঠানে  সামিল করে ঘরবন্দি প্রবীণ নবীন-সবুজ শিল্পীদের, তখন মন বলে না, না, সব আলো এখনও নিভে যায়নি পৃথিবী থেকে

    যখন দেখি একটা স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের টিফিন খরচ বাঁচিয়ে চারা-গাছ কিনে 'হলদিয়ার সবুজ বাহিনী' নামক সংগঠন গড়ে রাস্তার মোড়ে মোড়ে, শ্মশান কবরস্থানে গাছ লাগায়, শুধু পরিবেশকে ভালোবেসে -তখন জোর গলায় বলতে ইচ্ছে করে- আলো আছে,  এখনও ভালো বাসাবাসি আছে, এখন আশাও আছে

ফুল পাখি নদীর গল্পে শিশুদের বড় হয়ে ওঠার যথেষ্ট অবকাশও আছে


 

No comments:

Post a Comment