Tuesday, September 22, 2020

শহীদ - লেখা দাস মান্না

 শহীদ 

লেখা দাস মান্না  

 

খগেন  ধড়ফড়িয়ে বিছানার উপর উঠে বসেঘুমজড়ানো চোখে জানলা দিয়ে দেখে কোন ট্রেন গেল কিনা না, সব শান্ত তা হলে কি সে স্বপ্ন দেখছিল? আটটা বেজে গেছেভোর চারটেয় উঠে ঘুগনির হাঁড়ি ঘাড়ে নিয়ে চলন্ত ট্রেনে ওঠার তাড়া নেইজন্ম থেকে আজ পর্যন্তএই ভাবে ট্রেন বন্ধ হতে দেখেনি কখনো

    খগেনের ঘর রেললাইনের ধারে ঝুপড়িতেট্রেন আসা যাওয়ার দুলুনিতে চাঁচের বেড়ার বাড়ি বিছানার দুলুনিও তাদের রোজ আনি রোজ খাই জীবনের ওঠা-নামার মতোই সয়ে গেছে সেই সয়ে যাওয়া  জীবন দোলাটা পাঁচ মাস হল বন্ধ

    খগেন বাইরে এসে দাঁড়ালোরোদ আজ খুব চড়াহঠাৎ  কানে ভেসে এলো, "আমরা করব জয় নিশ্চয়" হাতের তালুর নিচে চোখ ঢেকে সামনের ক্লাবঘরটার দিকে তাকাল খগেন কয়েক  জন শহীদ বেদী সাজাচ্ছেস্বাধীনতা দিবস। ক্লাবের  দিকে যাবে বলে খগেন ঘরে ঢুকল মাস্ক আনতেমাস্ক পরে বাইরে এসেছে, এমন সময় দেখে একজন আশাকর্মী। সাইকেলে করে সামনের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় খগেনকে দেখে বলল, 'একটা খুব খারাপ খবর আছে খগেন দা। আমাদের ডাক্তারবাবু উজ্জল রায় আজ মারা গেছেন করোনা এত ভালো মানুষ টাকেও কেড়ে নিল'

    নির্বাক খগেন স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলতার চোখের উপর ভেসে চলেছে মাস খানেক আগের ঘটনা খগেনের ছেলে বিট্টুর ধূম জ্বর বুকে কফ জমে নীল হয়ে যাচ্ছে মুখ। লকডাউন চলছেডাক্তার নেই, ওষুধ নেই

    রেল লাইনের ওই পারে ডাক্তার বাবুর বাড়ি টাউনে চেম্বার করেন। দারুণ নামডাক দেবতা সমান ডাক্তারই প্রত্যেক বৃহস্পতিবার বসেন এই ঝুপড়ি বাসিদের ক্লাব ঘরে। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে  চিকিত্সা করেন

    খগেন অসুস্থ ছেলেকে কোলে করে ছুটে  ছিল ডাক্তারবাবুর বাড়ি অত রাতেও ডাক্তারবাবু বিট্টুকে দেখেছিলেন ওষুধের ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলেন

    লকডাউনের মধ্যেও একদিনও রোগী দেখা বন্ধ করেননি। 

    খগেন ধীর পায়ে সম্মোহিতের মত এগিয়ে চলল ক্লাবঘরের দিকে ক্লাবঘরের দেওয়াল থেকে একটা ছবি নামিয়ে আনল। ওই ক্লাবেরই খেলার পুরস্কার বিতরণীসভার ছবি, যার মাঝখানে সভাপতির আসনে বসে আছেন ডাক্তার বাবু

    খগেন ছবিটা বুকে করে এনে শহীদ বেদীর উপর  রাখলো স্যালুট করে বলল, 'স্বাধীনতা সংগ্রামের শহীদদের তো দেখিনি,  আজকের শহীদ তুমিই, ডাক্তার তুমিই।'


 

No comments:

Post a Comment