জোনাকিজন্মের যেটুকু আলো
শুভঙ্কর দাস
সুচেতন অনুভবের কবি জীবনানন্দ দাশের এই কথাটি সূচনায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে উঠে এল---
এই পৃথিবীর রণ রক্ত সফলতা সত্য, তবু শেষ সত্য নয়!
তাহলে শেষ সত্য কী? তা হল মানুষের শেষ পর্যন্ত মানুষ হয়ে এই দ্বন্দ্বমুখর পৃথিবীতে বেঁচে থাকা। কিন্তু মানুষের নানা দৈনন্দিন চাহিদা আর লেনদেনের পরে তাকে প্রকৃত মানুষ করবে কে? তখনই এই গতানুগতিক জীবন-যাপনের মধ্যে একটি জানালা চাই, যা থেকে আলোয় ভরা আকাশটা দেখা যাবে আর বিশুদ্ধ এক ছটাক শ্বাস নেওয়া যাবে। তা হল সৃজনশীলতা।
না, এটি করোনাকালীন কোনো কবিতার প্রাককথন নয়, কোনো কবিতা নয়, তবে একে কবিতার মতো বলা যায়।
না, আমি করোনা আক্রান্ত নই, আমি কোভিড 19 এর করাল গ্রাসে এখনও বন্দী হইনি!
না, এই আমি শুধু আমি নই, হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি সেই সাধারণ আমি কথা। যারা সেই রূপকথার সেই ভয়ংকর রাক্ষসের গল্পের নিতান্ত সাধারণ লোকগুলোর মতো অসহায় ও ভয়ার্ত। যে রাক্ষস গুহার ভেতর বসে থাকত আর গর্জন করত, আর প্রতিদিন একজন মানুষকে তার খাদ্য হয়ে যেতে হত।
প্রায় প্রতিদিন ঘুম ভাঙে আতঙ্কে আর দিনের শেষে ঘুমোতে যাই এই ভয়ে আগামীকাল সব ঠিক থাকবে তো!
সকালবেলা একটু মাথা ধরলে,দুপুরবেলা শুকনো কাশি হলে, রাতেরবেলা একটু শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে, মুখে মুখে কালো মেঘ জমে যায়! হায়! আমি বা আমরা সেই রাক্ষসের হাতে পড়লাম না তো!
এর মধ্যে আমরা কী করতে পারি? এই লকডাউন নামক অন্তরীন অবস্থায়? শুধু দিন প্রতিদিন সংবাদপত্র পাঠ আর দূরদর্শনের সংবাদ দর্শন। সেখান থেকেই শিখেছি, কীভাবে করোনা মোকাবিলা করা যায়! কীভাবে হাত ধুতে হয়! কীভাবে নিজেকে বা নিজের পরিবেশকে বিশুদ্ধ বা জীবাণুমুক্ত করা যায়! সবই জানছি, শিখছি, কিন্তু একই সঙ্গে এ-ও দেখে দিশেহারা হচ্ছি দিনরাত, খবরই দেখাল আক্রান্ত বিচারে দেশের ক্রমিক অবস্থান হতে পারে! সংবাদই দেখাল মৃত্যুর একটা রেকর্ড হতে পারে! খবরই দেখাল, মানুষের সর্বাধিক ভয়ার্ত মুখের ছবি!
অবশ্যই সাংবাদিকদের নিষ্ঠা ও শ্রমের প্রতিফলন সমাজ-ব্যক্তিজীবনে প্রচণ্ড প্রভাববিস্তারকারী। যে খবরটায় বা ঘটনায় আমাদের গুরুত্ব দেওয়া উচিত, কিন্তু আমরা দিচ্ছি না, সাংবাদিকদের খবরের জেরে তা সকলের সামনে উঠে আসছে, আবার খবরের জেরে কোনো রোগী হাসপাতালে বেড পাচ্ছেন বা কোনো অসহায়, আর্ত মানুষ খবরের জেরে সবরকমের সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা লাভ করছেন। এই ধরণের কাজের জন্য সাংবাদিকদের কুর্নিশ জানাতেই হয়। এসবেরও মাঝখানে আমরা অসহায় এবং আতঙ্কিত। রাক্ষসের ডাকের অপেক্ষায়...
আবার জীবনানন্দের শরণ,
"পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন
মানুষ তবুও ঋণী পৃথিবীর কাছে"
এই মানুষের সভ্যতা মানুষকেই রক্ষা করতে হবে। তাই সেইসব নার্স- ডাক্তার- স্বাস্থকর্মী এবং পুলিশ তার প্রমাণ করে চলেছেন রাতদিন!
তাই এই চরম দুঃসময়ে কয়েকটি কর্কশ কঠিন প্রশ্ন উঠেছে...
এই সময় কবিতা-ফবিতা লেখা উচিত? গান- গল্প- সাহিত্যচর্চা!
যারা লেখে, এদের কোনো সামাজিক দায়-দায়িত্ববোধ নেই! শুধু ফেসবুকে বা হোয়াট-আপ গ্রূপে গালভরা কথা! তারপর মানুষের গুজবপ্রিয়তা। করোনা নিয়ে, আক্রান্ত রোগী নিয়ে,হাসপাতাল নিয়ে, এমন কি যার করোনা হয়নি, শুধু সাধারণ কোনো কোনো রোগ হয়েছে ,তা নিয়ে গুজবের শেষ নেই! এর ফলে মানুষের দুরবস্থার যেন শেষ নেই!
প্রশ্ন হল, মানুষ কি করোনার আগে খুব, খুব দায়িত্বশীল ছিল! তখন কি কোনো গুজব ছিল না!
করোনার আগে তো আমরা দেখেছি কোনো দুর্ঘটনায় কবলিত মানুষ অসহায়, সাহায্যের সামান্য হাতটুকু পাননি! বাসস্ট্যান্ডে বা রেলস্টেশনে কত দুধের শিশুকে নিঃসহায় ভাবে ঘুরতে দেখেছি! কত মেয়ে-ছেলে রাতের অন্ধকারে পাচার হয়ে যাচ্ছে, তার হিসেব করে রেখেছে!
আমি তো জন্ম থেকে পৃথিবীর ধ্বংসের গুজব পাঁচ থেকে সাতবার শুনলাম, এমনকি একবার তো নষ্ট্রাদামুসের নাম ব্যবহার করে পৃথিবীর শেষদিন বলে এমনভাবে গুজব চাউর করে দেওয়া হল, অনেকেই সন্তানদের বুকে আগলে রাত জেগে কাটিয়েছেন স্রেফ একসঙ্গে মরে যাওয়ার ভয়ে!
তারমানে করোনা নয়, এই দায়িত্ব-জ্ঞানহীন সমাজ এবং গুজবের আগুনে গা সেঁকা মানুষের কোনোকালেই অভাব ছিল না! তারপর আমরা এই অদ্ভুত অতিমারী কোরানা নিয়ে কিছুই জানিও না! এই রোগের আক্রমণ এবং মৃত্যু সংখ্যার চেয়ে মানুষের মনের ভেতর যে হিমশীতল ভয় ঢুকে গেছে,তাকে সংখ্যা দিয়ে বিচার করা যা, আকাশের তারা গোনা একই ব্যাপার!
এই রোগের প্রকোপের সব তথ্য-সত্য -গুজব সব মিলে মিশে এমন পরিবেশ তৈরি হয়েছে, যে নিজের বাড়ির ছাদে যেতে বুক ছ্যাঁত করে ওঠে! এই রোগটা কি বাতাসে উড়ছে না তো!
একটা ছোট্ট ঘটনা। আমাদের পাড়ার খগা মাতির করোনা ধরা পড়েছে। এটি পৃথিবীর ক্ষেত্রে কোনো বড়সড় ঘটনা নয়, যতটা আমাদের পাড়ার ক্ষেত্রে! কারণ খগা মাতি বাজারে শাক-সবজি বিক্রি করত! নিজের হাতে লাগানো নিজের বাগানের টাটকা সবজি! ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ তার কাছ থেকেই সংগ্রহ করত। ফলে খগা মাতির করোনা ধরা পড়তেই, সারা পাড়ায় যেন বিষধর সাপ শুঁকে চলে গেছে! এই সময় উচিত তার পাশে দাঁড়ানো! তাকে সহযোগিতা করা! কিন্তু সেটা কীভাবে? খগা মাতির আসল নাম যে খগেশ্বর মাইতি, তাই তো করোনা হতে জানা গেল! আমরা করোনার পর তাকে আকুল করে জড়িয়ে সকলে মিলে কান্নাকাটি করতে পারি না! তার শরীরের কষ্ট বা যন্ত্রণার উপশম করতে পারি না! আমরা করোনার সঠিক কী চিকিৎসা, তাও কোথাও ট্রেনিং আমাদের কেউ দেয়নি! তাকে পুলিস তুলে নিয়ে চলে গেল! আমরা জানালা দিয়ে ভয়ে ভয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখলাম, আর সন্তানের দিকে তাকাতে গিয়ে চমকে উঠলাম! এখানে খগা মাতির সঙ্গে আমাদের কোনো পার্থক্য নেই। খগা মাতি যতখানি অসহায় ও যন্ত্রণাবিদ্ধ, ততোখানি আমরাও। কারণ আমাদের মধ্যে সকলেই প্রায় তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল, সবজি-সংক্রান্ত। তাহলে আমরা কী করতে পারি?
করোনা ঢুকলে একটা পরিবারে, তাদের কতজনের হয়েছে? তারা কী কী অবস্থা আছে, তার দেখভাল অবশ্যই তো পাড়া-প্রতিবেশীর করা উচিত! তার পরিবার যেন এই সময় ভেঙে না পড়ে, তাদের সামাজিক সুরক্ষা ও স্বাভাবিক জীবনযাপন যেন ব্যহত না হয়! তা সত্যি আমাদের দেখা উচিত। সেই রোগ যাতে আর না ছড়িয়ে যেতে পারে, তার ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
সমস্যা হল,এই প্রতিরোধ পদ্ধতি যথাযথভাবে কার জানা আছে? কে সাহস ভরে বলবে, যে এই এই করলে এই পরিস্থিতি খারাপ না হয়ে ভালো হতে পারে?
কে? কে? কে?
উত্তর নেই!
তার মানে পুরো বিষয়টা দাঁড়াল, করোনার আক্রান্ত, করোনার গুজব এবং করোনার চিকিৎসার মাঝখানে আমরা সেই বিদ্যুৎপৃষ্ট বাদুড়, দেখলে মনে হবে, কী সুন্দর ঝুলে আছে, আসলে সেও যে মৃত, তাই বুঝতে সময় চলে যায়!
একটা সত্যি এই, করোনায় যত মানুষ আক্রান্ত, করোনায় যত মানুষ মৃত, তার চেয়েও অধিক মানসিকভাবে আক্রান্ত এবং ততোধিক জীবন্মৃত এই ভয়ংকর পরিস্থিতিতে। সেই সুযোগে সেই অসভ্য নোংরা প্রবৃত্তির মানুষজন, যারা সমাজের সেই আদিকাল থেকেই ছিল, তাদের কাজই হল, যা ধ্বংসপ্রাপ্ত, তাকে আরও মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া! যে অসুস্থ, তাকে আরও রোগের শেষ খাদে ঠেলে দেওয়া! যে নিরুপায়, তাকে আরও বাজারভর্তি লোকের সামনে নগ্ন করা। এদের উদ্দেশ্যই ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলতেন, লোক না পোক অর্থাৎ কিলবিল পোকা!
তারপর করোনা কবে ছিল না!সবসময়ই ছিল। সেই সুদূর অতীতে যখন যীশুকে তাকে যে ক্রুশটায় বিদ্ধ করা হবে, তাঁকে তার যখন বহন করা হচ্ছিল, তখন ভয় নামক করোনা মানুষের মধ্যে ছিল! সেই সময়ে রোমান-সৈনিকরা একধরনের করোনা, কারণ কোনো মানুষ কি মানুষ হয়ে অপর একটা মানুষের হাতেপায়ে পেরেক ঠুকে ঠুকে হত্যা করতে পারে! তারপরও যীশু তাদের মঙ্গল ভিক্ষা করেছিলেন পরমকরুণাময়ের কাছে!
আরবে সেইসময় কোরাইশ বলে একটা জাত ছিল, তারাও করোনার মতো। হজরত মহম্মদকে তাদের জন্য প্রাণের ভয়ে মক্কা ছেড়ে মদিনা যেতে হয়েছিল! তারপর শান্তিসেনা তৈরি করে তিনি মক্কা জয় করেন, এরপর তিনিও তাদের শান্তির পতাকাতলে আনতে পেরেছিলেন!
শ্রীরামকৃষ্ণদেবের গলায় ক্যানসার নামক একটা এমন করোনার মতো ক্ষত হয়ছিল, তিনি যা খেতেন, সেই গলার গর্ত থেকে বেরিয়ে যেত! তারপরও তিনি মানুষের মঙ্গলচিন্তা করে গেছেন। এটা আসে পরম মানবিকতা থেকে!
আমাদের জীবন সেই পরমের সন্ধান। তা যদি এই করোনাকালীন কঠিন সময়ে কবিতা গান গল্প বা ছবি আঁকা বা যেকোনো সৃজনশীল কাজের মধ্যে করে চলে এ তো মানবজীবনে বড় জয়। ধরুন, যিনি কবিতা লেখেন বা সৃজনশীল কর্মের সঙ্গে যুক্ত, তিনি যদি করোনা আক্রান্ত হন, তাহলে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে অনেকেই ভার্চুয়ালি সাহস ও শক্তি যোগাবেন এবং তার পাশে থাকার কথা বলবেন, এটাও কম বড় ব্যাপার নয়। এই যে মানসিক শক্তি বৃদ্ধিতে সমর্থন, এ-ও কিন্তু করোনা-পরিস্থিতি জয় করার একটা পথ। শুধু রোগ নয়, রোগের ভয়ংকর পরিবেশ ও পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক ও সুন্দর করাও এই সময় যুদ্ধজয়ের সমান। তা কিন্তু এই কবিতা বা সোসাল মিডিয়ায় সৃজনশীলতা করতে পারে। কারণ মানুষের কাছে পৌঁছানোর এটা একটি অন্যতম শক্তিশালী মাধ্যম।
যে নার্স সারাদিন জীবন ক্ষয় করে কর্ম পালন করে, রাতের দিকে হোয়াটস্আপে ছোট্ট সন্তানের মুখে সুকুমার রায়ের ছড়া শুনে আনন্দে চেখের জলে ফেলছেন, তিনি সেই জলে পরের দিনের কাজের জন্য শক্তি পাচ্ছেন। যে ডাক্তার বিনিদ্র রাতের পরে রাত জেগে ডিউটি করছেন, তিনি একটু একা হলেই গীতা বা গীতাঞ্জলি পড়ছেন! কারণ তিনি রোগীর একমাত্র আশা, তাঁর আশার আলো এই পাঠশক্তি। যে পুলিস অফিসার থানায় বসে ফেসবুকে নিজের মেয়ের গান শুনছেন, তারও এতে যে কাজ করার সাপোর্ট সরকার দিচ্ছে, কিন্তু এই মানসিক সাপোর্ট সরকারও হয়তো দিতে পারবে না।
এইভাবে ভয়ংকর দুঃসময়ে অসহ্য অসহায় পরিস্থিতিতে সৃজনশীল মানুষ ও সৃজনকর্মই মানুষের শেষ ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে মহিলাকে আপনি সেজেগুজে ফেসবুকে গান করতে দেখলেন, মনে মনে ভাবলেন, কোনো কাজ নেই, এইসব ভঙ্গিমা করছে, খোঁজ নেবেন, তার শ্বশুরমশায় হার্টের রোগী, শাশুড়ী প্যারাকাইসিস, তার তিনটে সন্তান, স্বামী বিদেশে চাকুরি করেন, এখনও ফিরতে পারেননি! ওই গানই তার জীবনের কর্ম মুক্তি। যে লোকটাকে দেখলেন কবিতা নিয়ে লাইভ করছেন, অসংখ্য কবিতা প্রেমী মানুষকে আনন্দ দিচ্ছেন, তিনি নিজে বাতের রোগী, তা সত্ত্বেও তাঁকেই বাজার হাট করতে হয়, তাঁকেই হাসপাতালে প্রয়োজনীয় জিনিস দিতে যেতে হয় ,কারণ তাঁর কন্যা সেখানকার ডাক্তার।
এই কবিতা সে যেমন মানের হোক, এই যে গান, সে সরগমের সবচেয়ে নীচু স্তরের হোক, সবই কিন্তু এই অসুস্থ ও অন্ধকার সময়কে হারানোর এক নিরন্তর প্রয়াস। আবার কবি জীবনানন্দের চরণ ধরি--পৃথিবীর রণ রক্ত সফলতা শেষ নয়,
তারপর তিনি জানাচ্ছেন
এক মানুষের তরে একটা মানুষের গভীর হৃদয়
এটাই দরকার। না, এটা শুধু ব্যক্তিগত প্রেমের কথা বলা হয়নি, তাহলে পুরুষের হৃদয়ের কাছে নারীর হৃদয় বলতেন, তিনি মানুষ-মানুষী বলেছেন, অর্থাৎ মানবিকতা সম্পন্ন মানুষ। তা যদি কবিতার মতো সৃজন থেকে গৃহশান্তি ও গৃহ সুরক্ষা বজায় থাকে,তাও এই সময় কম মূল্যবান নয়! তাই যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে মানুষ বাঁচবে কী করে?
আমাদের মনশক্তি আমাদের সকল করোনাকঠিন পরিস্থিতি ও দুঃসময়ের একমাত্র বন্ধু, জীবনীশক্তি এবং মৃতসঞ্জীবনী সুধা। আর তা একমাত্র সৃজনশীলতা দিতে পারে, সেবামূলক কাজ দিতে পারে, যে কোনো ইতিবাচক-গঠনমূলক কর্ম এনে দিতে পারে। এই চরম ভয়ংকর দুঃসময়ে মানুষের মননশক্তিকে বাঁচিয়ে রাখা,লালন করা এবং সুবুদ্ধি করা যেকোনো বৃহৎ যুদ্ধজয়ের সমান। এখানে একটি কথা, খুব বিনত স্বরে উচ্চারণ করছি, আমার এই অনুভবে যদি বিন্দুমাত্র আঁতলেমি বা সবজান্তাগিরি অথবা লোকদেখানো মনে হয়, তার জন্য মাথা নত করে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। এবং যাঁরা এই করোনাকালীন কঠিনতম পরিবেশে ও পরিস্থিতিতে কাজ করে চলেছেন, নিরন্তর, সে ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী বা সেবাকর্মী, পুলিস,সাংবাদিক---সকলকে অন্তর থেকে স্যালুট জানাই। তাঁদের জন্য এই সমাজ-সভ্যতা জীবন্ত নদীর মতো প্রবহমান। সুন্দর এবং এখনও পর্যন্ত বাসযোগ্য।
পরিশেষে আমার মনে হয় এই ভাবনা---
আমি জানি,ভালো থাকুন বললেই,আপনার দিনটা
ভালো হয়ে উঠবে না!
আমি জানি,সুপ্রভাত বললেই,আপনার ভাগের সূর্যোদয়
সুন্দর হয়ে উঠবে না!
আপনার চোখের জলে আমার নৌকা কাজে আসবে না,
আপনার অপমানের,আঘাতের অন্ধকারে আমার সহানুভূতি
মোমবাতি হবে না!
আপনার গুলিবিদ্ধবুকে আমি হয়ে উঠব না শুশ্রূষার তুলো!
তবু 'ভালো থেকো' বলব
তবু 'সুপ্রভাত' জানাব
তবু কবিতা শোনাব
কারণ শ্মশানের চেয়ে সৌজন্য, যুদ্ধক্ষেত্রের চেয়ে যোগাযোগ, রক্তপাতের চেয়ে রুচিবোধ
আমাদের শেষ সম্বল
এই অন্ধকারে
এই হাহাকারে
তা একে- অপরের পারাপারে হারাই কী করে?
No comments:
Post a Comment