Tuesday, September 22, 2020

আকাশ আলোর গান - মঞ্জীর বাগ

 আকাশ আলোর গান

মঞ্জীর বাগ

 

অন্ধকারের গান শুনবো বলে আলোর প্রদীপটি নিবিয়ে দিয়ে বসি। ঘাড়ের কাছে যেন কার শ্বাস। ঠান্ডা হিমের মতো। মৃত্যু কি এমনই শীতল। কয়েকটি মাস ধরে আমরা ঠোটে মৃত্যুর চুম্বন বিষ নিয়ে ঘুরছি। আমার ঘুমন্ত সন্তানের কপালে ঠোট ছোঁয়াতে গেলেই মনে হয় আমি কি মৃত্যু?  এভাবে বদ্ধ থাকতে হবেএকথা কি জানা ছিল? 

   বহুদিন ছুটতে ছুটতে এ-ক্লান্ত পৃথিবীর সাথে আমরাও এতো ক্লান্ত ছিলাম যে আমাদের যে ঘুম এসেছে তা বুঝতে পারিনি। আকাশের নীল রঙ যে ধূসর হচ্ছে তা বুঝে উঠতে পারিনি। আমাদের জলে দূষণ লেগেছে। আকাশের ধৃসর রঙকেই স্বাভাবিক মনে করেছি। আমরা একদিন গঙ্গা ধারে বসে ছিলাম। দেউলটিতে শরৎবাবুর বাড়ি। কিরনবালা ঘুমিয়ে আছে। আমরা গঙ্গা তীরে বসলাম। আমাদের চেনা পরিচয় দুরে ফেলে নতুন  হওয়ার বাসনায়। দেখি গঙ্গার বুকের ওপর আবর্জনা  ভেসে যাচ্ছে। আমাদের সম্পর্কও কি এমন দৃষিত হচ্ছে ধীরে ধীরে..এই গঙ্গার  জলে আমি চোখ বুঝলেই সেই স্পর্শ টা ছুঁতে পারি। আমার ভেতর যে বাড়ছে,দুপদুপ করে গর্ভ দেওয়ালে পা ছুঁড়ছে, সে তার রক্তের বন্ধন চেনে। পূর্ণ অবস্থায় সেও পিতৃ ঘ্রাণ চেনে। তার স্বরে সে ও সাড়া দিয়ে ওঠে। আমি গর্ভসন্দেশ বুঝি।

    তবে আমিও কি পৃথিবীর মতন? শুদ্ধতার গান থেকে অপবিত্র স্পর্শে দূষিত হয়ে উঠি গঙ্গার মতন? তোমার  চেয়েতো শুদ্ধ কিছুই  নেই। তবে কেন ভিন্ন ভিন্ন ঠিকানায় স্পর্শ খোঁজ? অন্ধকার নিভৃত সুরে তুমি ছুঁলে দংশন বলে ভাবি। নিভৃত শরীর দেখেছ। নিরালা অন্তর দেখনি।আমাদের তাই কোয়েন্টাইন....

    বাংলাদেশ থেকে যেদিন ফিরছি সেইদিনই..., প্রথম এয়ারপোর্টে চেকিং। কস্কবাজারের সমুদ্র বা সীতাকুণ্ডের জঙ্গল কিংবা মন্দারমণি সবাই নিশ্চুপ। সময়ের গতিতে ছুটতে ছুটতে আমাদের হাঁপ ধরে যাচ্ছে। কার্বন-ডাই-অক্সাইডে ভরে যাচ্ছে। কার্বন-ডাই-অক্সাইড ফুটো করে দিচ্ছে বায়ু মন্ডলের চাদর। পৃথিবী চিন্তায়।

    কিন্তু এই গৃহাবাসে, কোয়েন্টাইনে পৃথিবীর দূষণ কমে যাচ্ছে। সকালে পুব আকাশের সাথে কথা বলি যখন দেখি আকাশটা এতো নীল..সূর্য কি এতোটাই লাল ছিল..পাখিরা বড় বেশি ডাকছে।

    দেবারতি হোয়াট্স আপে দেখালো অস্ট্রেলিয়ার রাস্তায় ক্যাঙ্গারু ঘুরছে। হরিন ওদের বাগানে গোলাপের কুঁড়ি খেতে এসেছে..

    বিজ্ঞানীরা অবাক। ওজনস্তরের ছেঁদাটা নিজে থেকেই সেরে গেছে। আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা নিশ্বাস নিচ্ছেন ধীরে..

    বাসু বলল কস্কবাজারের লাল কাঁকড়ারা সমুদ্রতীর জুড়ে ছুটে বেড়াচ্ছা। বেলাভূমি সমুদ্র লতায় ভরে উঠেছে। সমুদ্রের ঢেউয়ের  বুকে বছর তিরিশ পরে আবার হরিণ  ছূটছে।

    পৃথিবী দম বন্ধ হয়ে আসছিল। এবার আকাশ আলোর গান লিখেছে। কাঠঠোকরা পাখিটা আবার ফিরে এসেছে। ভোর বেলায় ঠোট দিয়ে ডাকে।আমি অন্তরের দিকে তাকাই। এই অবসরে জমে থাকা বেদনা সরিয়ে আলোর গান গাই...আকাশ কি শুনেছে?


 

No comments:

Post a Comment