Tuesday, September 22, 2020

পথের বাঁকে - রাজকুমার আচার্

 পথের বাঁকে

রাজকুমার আচার্য  

       

সঙ্কোচ হচ্ছিল সজলের তবু তাকে বলতে হল, ‘একশো টাকার দাও।

    তেলপাম্পের ছেলেটি একটু আড়চোখে দেখল সজলকে। সজল এত কম টাকার তেল কখনও বাইকে ভরে না। এখন কিচ্ছু করার নেই। দিন দিন পকেট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া লকউাউন চলছে, বাড়ি থেকে বেরনোর ইচ্ছেও করে না।

    পীচ রাস্তা দিয়ে বাইক চালিয়ে ফিরছে আর মনের ভেতর নানা ভাবনা এসে ভিড় করছে সজলের। করোনা মহামারী আর আমপান সাইক্লোনের তাণ্ডবে চারদিক যেন শ্মশান হয়ে গেছে। গ্রামের রাস্তাকে বড়ো অচেনা লাগছে। সবুজ শূন্য গ্রাম! পথেঘাটে লোকজন নেই। বহুদিন পর আজ বেরিয়েছে সে। দুএকটা ওষুধ কেনার ছিল। সে ভাবছে আগামী দিনগুলো কীভাবে চলবে। বেকার জীবনে সে সবেমাত্র টিউশন জমিয়ে তুলেছিল কিন্তু মহামারীর কবলে সব বন্ধ। কেউ তো কারুর বাড়িও যাচ্ছে না। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন হারিয়ে যাচ্ছে আঁধারে। এর শেষ কোথায় কেউ তো জানে না। সংসার চলবে কীভাবে? তার উপর আমপান তো একেবারেই বিধ্বস্ত করে দিয়ে গেছে। চারিদিকে যেন শ্মশানের নিস্তব্ধতা!

 

খালপাড়ে চৌরাস্তার মোড়ে সবুজ ঘাগরা পরে দাঁড়িয়ে আছে অর্পনা। পাড়ের গাছগাছালি সব যেন শব হয়ে পড়ে আছে। চারদিক শুনশান। কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টি হয়ে গেছে। আমপানের তাণ্ডবে এমনতেই মাঠ জলে থৈথৈ। সেদিকেই তাকিয়ে আছে সে। সূর্যের আলো থৈথৈ জল বেয়ে তার মুখে এসে লেগে আরও অপূর্ব করে তুলছে তাকে। সেই পথেই ফিরছে সজল। পীচ রাস্তা থেকে নেমে কাঠের ব্রিজ পেরতে গিয়ে অবাক হয় সে। পেছন দিক দিয়ে দেখল, মহামারীর শুনশান রাস্তায় কে এমন অপরূপা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে! কাঠের ব্রিজের উপর বাইকের শব্দ হতেই ফিরে তাকাল অর্পনা। এক ঝলক চোখে চোখ হতেই সজলের বুকটা যেন দাউদাউ করে জ্বলে উঠল! মুহূর্তের এই দেখা সারা পৃথিবীকে মুহূর্তেই সুন্দর করে তুলল। আঁধারে যেমন কেরোসিন শিখা জ্বলে ওঠে। অস্পষ্টে বলে উঠল, ‘অর্পনা!

    মুহূর্তের মধ্যে অর্পনাকে পেরিয়ে যেতে হল সজলকে। বাইকের গতি ধীর ছিল আরও ধীর হল। কিন্তু পেছন ফিরে তাকানো এই মুহূর্তে আর ঠিক হবে না। অর্পনা দেখল সজলের বাইকের চাকা গড়িয়ে গড়িয়ে কংক্রিটের পথ মাড়িয়ে চলে যাচ্ছে। যেমন জীবন গড়িয়ে যায় অনিশ্চিতের দিকে।


 

No comments:

Post a Comment